ভিকারুননিসা-আইডিয়ালে নির্বাচনী আমেজ


প্রকাশিত: ০৩:৫৮ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৭

নয় বছর পর শনিবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ২৯ তারিখ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

নির্বাচনে জয়ী হতে প্রার্থীরা অভিভাবকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অভিভাবকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নানা প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন। বহু বছর পর নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লেগেছে। তবে আইডিয়ালের দুই স্তরের নির্বাচনে প্রার্থীদের জোর করে মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিংবডির নির্বাচন শনিবার সকাল ১০ট থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের চার শাখায় একটানা অনুষ্ঠিত হবে। চারটি শাখায় ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। এর মধ্যে বেইলি রোডের প্রধান শাখায় ভোটার প্রায় ১৩ হাজার, বসুন্ধরা শাখায় সাড়ে পাঁচ হাজার, ধানমন্ডি শাখায় এক হাজার সাতশ ও আজিমপুর শাখায় প্রায় দুই হাজার আটশ ভোটার রয়েছেন।

অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন ছয়জন। তাদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে দুজন করে, প্রাথমিক স্তরে একজন সাধারণ ও একজন সংরক্ষিত নারী অভিভাবক সদস্য অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে কলেজ ও বিদ্যালয় স্তরে একজন করে এবং একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। নয়টি পদে ৪২ জন লড়াই করছেন। অধ্যক্ষ পদাধিকারবলে গভর্নিং বডির সদস্যসচিব মনোনিত হবেন। আরেকজন বিদ্যোৎসাহী সরকার কর্তৃক মনোনিত হবেন। এরপরে ১১ জনের  ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত শিক্ষা অফিসার আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

বৃহম্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের চারিদিকে বাহারি রংঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অপেক্ষমান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা দিক তুলে ধরে ভোট চাইছেন। প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য রক্ষাসহ অভিভাবকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে শিক্ষকদের কোচিং ব্যাণিজ্য বন্ধেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অনেকে।

একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, তারা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত তথ্য সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বিগত দিনে বাড়তি টিউশন ফি বন্ধে অভিাভাবকদের সঙ্গে থেকে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরই তারা বেছে নিবেন।

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে দিনরাত পরিশ্রম করছি। নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু ভোট গ্রহণের অপেক্ষা।

এদিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ২৯ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের অভিভাবক প্রতিনিধি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাহিদুল ইসলাম টিপু নির্বাচিত হয়েছেন। আর দাতা সদস্য হিসবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মাধ্যমিক স্তরের ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, জাহিদুল হইসলাম টিপু, সোহেল আহমেদ সিদ্দিকি, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রব মিয়া, মোহাম্মদ আলী, মো. সজল মিয়া, মো. আছমত আলী, মো. সাইফুল্লাহ। কলেজ স্তরে আহসান উল্লাহ মানিক ও ইউসুফ আলী এবং ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী অভিভাবকপদে নার্গিস আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৪ হাজার ভোটার রয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিটি ক্যাম্পাসে আলাদা নির্বাচন হলেও আইডিয়ালে সবগুলো শাখার একত্রে ভোট হবে।

প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা কাউকে মনোনায়নপত্র সংগ্রহ করতে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। তারপরও যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছেন। মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক ভুয়া সনদে চাকরি নিয়েছেন। এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতেও ভুয়া সনদ প্রমাণিত হয়েছে। এখন তিনি চাকরি রক্ষায় নিকট আত্মীয় নার্গিস আক্তারকে সংরক্ষিত নারী অভিভাবক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। অভিভাবদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া তাদের বিষয়। এ নিয়ে কোন অভিভাবক আমার কাছে অভিযোগ করেনি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে।

প্রসঙ্গ, গত নয় বছর ধরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান অ্যাডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আগেও যখন নির্বাচন হতো তখন সংসদ সদস্যরাই সভাপতি হতেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখন থেকে কোন সংসদ সদস্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। যে কারণে এবারের নির্বাচন অভিভাবকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

এমএইচএম/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।