প্রাথমিক শিক্ষার ব্যর্থতা মুছতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ


প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ২০ মার্চ ২০১৭

কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেও শিক্ষকসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলায় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নতুনভাবে নয় দফা নির্দেশনা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে দুই কোটি ১৭ লাখ শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যায়নরত।

এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষকদের। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতিসংঘের এসডিজি অর্জন, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা, শিক্ষানীতি-২০১০ এবং সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। সরকার স্কুলের জাতীয়করণ, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

এরপরও বিগত বছরগুলোতে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ফলাফলে শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষার মানে হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হতে পারেননি, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে দাবি করে নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, গত আট বছরে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের দক্ষ করতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।

এমনকি মাঠপর্যায়ের পরিদর্শন কর্মকর্তারাও অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি উপেক্ষা করছেন। এ অবস্থায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, ইন্সট্রাক্টরদের প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন করা হবে। তারা প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থ হলে কিংবা প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যর্থ হলে বিভাগীয় শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা ও সহমর্মিতা দেখালে শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।

এছাড়া প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের ব্যয়িত অর্থ ফেরত দেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার কথাও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা, দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা ও পাঠ উপকরণ নিয়ে পঠন প্রক্রিয়া কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তোলা শিক্ষকদের দায়িত্ব।

শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার জন্য আগ্রহী করতে এবং শ্রেণিকক্ষে ধরে রাখতে স্কুলের আনন্দঘন সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করাও আবশ্যক। এসব কাজে সরকার অর্থ বরাদ্দ করলেও বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে তা পালন করা হচ্ছে না। বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে স্কুল পরিদর্শন কর্মকর্তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়।

এমনও দেখা গেছে, অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও দীর্ঘদিনেও তা খরচ হচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। যে কারণে স্কুলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে না। ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানসহ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি স্কুলে আইসিটি সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে- এমন দাবি করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এগুলো পরিচালনায় শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে ব্যবহারিক ধারণা ও দক্ষতা দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এ নির্দেশনা প্রাথমিক শিক্ষার সব বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, সহকারী উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা ও থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নানা জটিলতায় প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ছে না। এ কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরকে নয় দফা নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে।’

‘নির্দেশনার আওতায় মাঠপর্যায়ের সকলে অন্তর্ভুক্ত’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচএম/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।