হতাশা নিয়েই কর্মস্থলে ফিরলেন কলেজ অধ্যক্ষরা


প্রকাশিত: ০৪:০১ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিক্ষক ও জনবল সংকট, অবকাঠামো সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, ঝরে পড়াসহ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলছে দেশের সরকারি কলেজগুলো। এসব কারণে সরকারি কলেজে শিক্ষার মান নিম্নমুখী। ভালো ফলাফল থেকেও পিছিয়ে পড়ছে তারা। এসব সমস্যা ও তার সমাধানে গতকাল রোববার দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছিল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলন-২০১৭। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আয়োজনে রাজধানীর আজিমপুর গভর্মেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটরিয়ামে এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সারা দেশ থেকে আগত ৩২৭ সরকারি কলেজের ৩২৭ জন অধ্যক্ষ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তারা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সামনে নিজ প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো তুলে ধরে তা সমাধানের দাবি জানান। সব অধ্যক্ষকে আমন্ত্রণ করা হলেও সবাইকে সমস্যাগুলো বলতে সুযোগ দেয়া হয়নি। হলরুম থেকে বের হওয়ার সময় এমন অভিযোগ করেছেন তারা। ফলে নিজ প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো বলতে না পারার হতাশা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হলো অনেক অধ্যক্ষকে।

অধ্যক্ষ সম্মেলনে জামালপুল সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, তার স্কুলে ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৭০ জন শিক্ষক রয়েছে। এতো স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা দূরের কথা প্রতিষ্ঠান চালানোই কঠিন হচ্ছে। তার কলেজে আরও ১০০ জন শিক্ষক প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চাহিদা দিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, তার কলেজের সব ভবন ধসে পড়ে যাচ্ছে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ক্লাস করানো হচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে বারবার লিখিতভাবে জানালেও কেউ আমলে নিচ্ছেন না বলে জানান।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জানান, তার কলেজে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী। অথচ কোনোমতে অল্প কয়টা ক্লাসরুম ও স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে ক্লাস কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তার কলেজে দ্রুত ক্লাসরুম বৃদ্ধি ও শিক্ষক নিয়োগের দাবি তোলেন তিনি।

রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, তার কলেজে শিক্ষক সঙ্কট চরম পর্যায়ে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও ক্লাসরুমে বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ জানান, তার প্রতিষ্ঠানে হোস্টেল না থাকায় শিক্ষার্থী ভতি কমে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত হোস্টেল তৈরির আহ্বান জানান।

এটি একটি সফল সম্মেলন উল্লেখ করে সবার সমস্যা সমধানের আশ্বাস দেন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহেদুজ্জান। পাশাপাশি তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আপনাদের সমস্যাগুলো সম্পকে অবগত। পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার নিরসন করা হবে।

তবে সব প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানালেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৩২৭টি সরকারি কলেজ রয়েছে। সেসব কলেজে নানা সমস্যাও রয়েছে। এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি সব শিক্ষককে নিজ দায়িত্ব সর্ম্পকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

মাউশির মহাপরিচালকের সভাপত্বিতে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল, বিবিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আইকে সেলিমুল্লাহ খন্দকার প্রমুখ।
 
শিক্ষক সম্মেলন দুইটি সেশনে আয়োজন করা হয়। সকালে ৮টি বিভাগের ৯টি দল করে চলমান সমস্যা নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেসব সমস্যার নানা সমাধানের পথ বের করেন আমন্ত্রীত প্রধান শিক্ষকরা। দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিক্ষকরা তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।

এমএইচএম/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।