ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে চীন


প্রকাশিত: ০৪:৩৬ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

ফেসবুকের মতো বেশকিছু জনপ্রিয় সাইট চীনে নিষিদ্ধ। কিন্তু ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের (ভিপিএন) মাধ্যমে গোপনে নিষিদ্ধ সাইটগুলো ব্রাউজ করেন চীনারা। এবার ভিপিএন সেবাও বন্ধ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বেশকিছু চীনা ভিপিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি জানায়, তাদের গ্রাহকরা একাধিক সেবা ব্যবহার করতে পারছেন না। এ পদক্ষেপকে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর এপি।

ভিপিএন সেবাদাতা গোল্ডেন ফ্রগ জানায়, এ সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ হয়েছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাসট্রিল জানায়, এ সপ্তাহে তাদের গ্রাহকরা অ্যাপলের মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে জি-মেইল সেবা ব্যবহার করতে পারছিলেন না। স্পর্শকাতর রাজনৈতিক তথ্য রয়েছে দাবি করে এর আগে হাজারো ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে চীন সরকার। এ কারণে চীনের নাগরিকরা বৈশ্বিক অনেক ইন্টারনেট সেবাই ব্যবহার করতে পারেন না। চীনে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক চীনা নাগরিক বন্ধ করে দেয়া ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারে মূলত ভিপিএন সেবার ওপর নির্ভরশীল; যা দেশটির বাইরের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সব সেবায় প্রবেশের সুবিধা দেয়।

অনেক আগে থেকেই ভিপিএন সেবায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করছে চীন সরকার। তবে সাম্প্রতিক উদ্যোগ আগেরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। এ বিষয়ে গোল্ডেন ফ্রগের প্রেসিডেন্ট সানডে ইয়োকুবাইতিস বলেন, ‘নাগরিকরা যাতে গ্রেট ফায়ারওয়াল অতিক্রম করে নিষিদ্ধ সাইট ব্যবহার করতে না পারে, কয়েক বছর ধরেই চীন সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির সরকারের এ সপ্তাহের উদ্যোগ আগেরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ভিপিএনের ওপর নির্ভরশীল ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য আর্থিকভাবে সচ্ছল। এ বিষয়ে চীনভিত্তিক উদ্যোক্তা রিচার্ড রবিনসন বলেন, ‘অনেক বড় প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরের নেটওয়ার্ক সরাসরি ব্যবহারে সক্ষম। কিন্তু ভিপিএনের ওপর নির্ভরশীল ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

অনেক বিদেশী সেবার ওপর নিয়মিতই কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে চীন। অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠানও এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দেশটিতে নিজেদের সেবা সরবরাহ করছে। কিন্তু মার্কিন প্রতিষ্ঠান গুগল ২০১০ সালে চীনা সেন্সরশিপের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ করবে না বলে জানায়। এর পর থেকেই চীনে গুগলের বিভিন্ন সেবা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে। গত কয়েক সপ্তাহে চীনে গুগলের যে সেবাগুলো বাকি ছিল, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। রবিনসন এ বিষয়ে জানান, অনেক ছোট ব্যবসায়ী জি-মেইলের ওপর নির্ভরশীল। আর তারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন।

ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়াও কিয়াং জানান, সাম্প্রতিক সময়ে চীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইন্টারনেট সেবাগুলো চালু রাখলে এ খবর বিশ্বব্যাপী ছাড়িয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় নিয়ন্ত্রণ সাম্প্রতিক সময়ে আরো বাড়ানো হচ্ছে। মূলত রাজনৈতিক খবর যাতে না ছড়ায়, এ কারণেই চীন সরকার ইন্টারনেট সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন জিয়াও।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।