দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের
বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। একইসঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষকদের উত্থাপিত তিন দফা দাবির বিষয় নিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও শিক্ষাসচিব রেহানা পারভীন। আলোচনা শেষে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জোটের সদস্যসচিব।
বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
শিক্ষাসচিব রেহানা পারভীন বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বা সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে আগামী বেতন স্কেলে শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে বলেও জানান শিক্ষাসচিব।
বৈঠক শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, গত ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও শহীদ মিনারের সামনে আমরা দাবি আদায়ে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে টানা ২২ দিন এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করেছি। তখন শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমাদের উৎসব ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বর্তমান বাজেট থেকে দেওয়া হবে এবং শিক্ষকদের জন্য আরেকটি বিনোদন ভাতা বৃদ্ধি করবেন। সেই আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাই। তখন আমরা আলটিমেটাম দিয়েছিলাম যে, ভাতা কার্যকর না হলে আমরা আবার আন্দোলনে আসবো। সরকার আমাদের উৎসব ভাতা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান/ছবি: সংগৃহীত
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমাদের অন্যান্য ভাতা বাড়ানো হবে এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। এরপর আমরা একটা আলটিমেটাম দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেই আগস্টে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৩ আগস্টের মধ্যে এবিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যাবো। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ভাতা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ ও বাড়িভাড়া ৫ শতাংশসহ অন্যান্য কিছু সুবিধা দিয়ে একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেই চিঠি আমাদের কাছে আসে। তারপর আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৩ আগস্ট থেকে আন্দোলনে আসলাম। তখন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা সভা করে বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করলে তিনি তাতে রাজি হন। তারপর আমরা সেখান থেকে চলে যাই।
মাওলানা দেলাওয়ার বলেন, আজ আমাদের এখানে ডাকা হয়েছে সমস্যা সমাধানের জন্য। আমরাও চাই সমস্যা সমাধান করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবো। কিন্তু আজ আসার পর তারা আগের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও সরতে রাজি নন। তারা আলোচনার নামে আইওয়াশ করেছেন। তারপরও আমরা আজ আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে আমরা বর্তমান বাজেট থেকে ১০ শতাংশ বাড়িভাড়া এবং আগামী বাজেট থেকে ১০ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সেটা তারা করেননি।
শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলোয়ার আরও বলেন, কোনো অবস্থায়ই আমরা শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরবো না। আমরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করবো না। শান্তিপূর্ণভাবে অনশন করতে করতে এখানে প্রয়োজনে মরে যাবো, তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাবো না।
এমএএস/এমএমকে/এমএস