খোলস ছেড়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো পুরোদমে চালু হয়নি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই বন্ধ। যেগুলো খুলেছে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম। এর মধ্যেই ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে। এতে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথও উত্তাল হয়ে ওঠে। ঘোষিত কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি সরব দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। দিনভর চলা এ কর্মসূচি সফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে পাবলিকের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও এখন অগ্রগামী হয়ে উঠছেন।
সবশেষ ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে এ চিত্র দেখা গেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, বসুন্ধরা, নতুনবাজার, রামপুরা, আফতাবনগর, সায়েন্সল্যাব, মালিবাগ, মিরপুর ইসিবি চত্বর, মহাখালী, আশুলিয়া, মোহাম্মদপুরসহ বেশিরভাগ পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সামনের সারিতে ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোর্চা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পুসাব) দিক-নির্দেশনায় রাজধানীজুড়ে এদিন ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণার পর ঢাকায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবির আন্দোলন সচল রেখেছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তীসময়ে তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তারপরও দেশের স্বার্থে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান।
বাড্ডা-রামপুরায় সক্রিয় তিন বিশ্ববিদ্যালয়
জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৫ জুলাইয়ের পর বাড্ডা-রামপুরা, গুলশান-শাহজাদপুর ও নতুনবাজার এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন সচল রেখেছিলেন বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
নো ওয়ার্ক নো স্কুল, বিক্ষোভ-সমাবেশে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ
নতুন ছাত্রসংগঠনের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বেসরকারি শিক্ষার্থীদের
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা কর্মসূচির সূচনাও করেছেন এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল ৯টার দিক থেকে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা সেখানে মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান কবির জাগো নিউজকে বলেন, ন্যায্য অধিকার আদায়ের যেকোনো আন্দোলনে আমরা জান-প্রাণ দিয়ে লড়তে চাই। মানবাধিকার সমুন্নত রাখার আন্দোলনে থাকতে চাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন-সংগ্রাম বেশি করে, প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা স্বার্থপর- এমন ধারণা সবার মধ্যে ছিল। সেই ধারণা আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পাল্টে দিয়েছি। সবাই দেখেছে, আমরা কী করতে পারি।
একই সময়ে আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বাড্ডা-রামপুরা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। দফায় দফায় সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকেলে তারা ফিরে যান। এছাড়া ওই এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেন বেসরকারি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির একটি বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রী সাদিকা বিনতে শাফিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সব যৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে আছি, আগামীতেও থাকবো। কিন্তু কারও ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হবো না। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ। আজ আমরা ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের পক্ষে রাস্তায় নেমেছি। এ কর্মসূচিতে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই বেশি।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ সরব। আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ভূমিকা থাকে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কর্মসূচি হলে যেভাবে মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রোগ্রাম সেভাবে গুরুত্ব পায় না। ফলে প্রচার-প্রচারণা কম থাকে।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণমাধ্যম প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তারাই এ আন্দোলন টিকিয়ে রেখেছিলেন। এরপর থেকে অবশ্য মিডিয়ার একচোখা নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন অনেকে সাংবাদিকতা পেশায়। তারা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামগুলো, তাদের কথাগুলো প্রচার করছে। আন্দোলন কর্মসূচিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বসুন্ধরা গেট-নতুনবাজার আরেক ‘হটস্পট’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানগত কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আরেক হটস্পট হয়ে উঠেছে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট থেকে নতুনবাজার হয়ে কুড়িল এলাকা। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াসহ বিভিন্ন আন্দোলনে এ এলাকায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
(ইউআইইউ)।
আরও পড়ুন
- ধর্ষকের ফাঁসি দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান নিয়ে যা বললেন সারজিস
- কুড়িল-রামপুরা সড়কে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এ এলাকাতে শক্ত অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিলেন এ চার বিশ্ববিদ্যালয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হন। আহত হন অনেকে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার বেলা ১১টা থেকে বসুন্ধরা গেট ও নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এ চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মার্কিন দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিয়েও বিক্ষোভ করেন। এটি গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অর্থবহ বলে মনে করা হচ্ছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র, মানবাধিকার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে ভূমিকা রেখে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় চব্বিশে আমরা রাস্তায় নেমে সরকারকে গদি ছাড়তে বাধ্য করেছি। বৈশ্বিক ইস্যু হলেও ফিলিস্তিনিদের পাশে থেকে বাংলাদেশে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামীতেও যেকোনো আন্দোলনে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আইইউবির শিক্ষার্থী আরেফিন নাফিস বলেন, আমরা সবসময় ছিলাম। যারা বলতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এত শিক্ষার্থী, তারা কেন মাঠে নামে না। এখন সেটা বলার সুযোগ নেই। আমরা মাঠে, অন্যরা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত।
আশুলিয়ায় ৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুরিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। একই এলাকায় রয়েছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। সেগুলো হলো—মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি। জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
সম্প্রতি দেশজুড়ে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, খুন-হত্যা বেড়ে গেলে তার প্রতিবাদেও রাস্তায় নামেন ড্যাফোডিল, মানারাত, ইস্টার্ন ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এবার ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েও তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন।
মিরপুর-বনানী-উত্তরায় বিভিন্ন পয়েন্টেও শক্ত অবস্থান
ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় আরও বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আন্দোলন-সংগ্রামে শক্ত অবস্থান দেখা যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তার মধ্যে রাজধানীর বেইলি রোডে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর এলাকায় ইউল্যাব, উত্তরায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বনানীতে প্রাইম এশিয়া, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড এবং স্কলার্স ইউনিভার্সিটি, মিরপুরে প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দ্রুত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েও বাস্তবায়নে জনবল জোগাড় করতে সক্ষম।
ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলন, জুলাই অভ্যুত্থান এবং সবশেষ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তাদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকায় যেকোনো আন্দোলন সফল হয়ে ওঠে।
‘দেশ পরিচালনায়ও নেতৃত্বে থাকবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোর্চা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পুসাব) নির্বাহী সদস্য সাকিন শাদাব। তিনি বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে সাকিন শাদাব জাগো নিউজকে বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরাবরই অধিকার আদায় ও সমাজ-রাষ্ট্রের কল্যাণে রাস্তায় নেমেছে। হয়তো কখনো সেটার কৃতিত্ব পেয়েছে, কখনো পায়নি। কৃতিত্বের চেয়ে আমরা নিজেদের নৈতিকতা, বিবেকের তাড়না এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে রাজপথে নেমেছি। আমাদের এ ধারা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, গতকাল (রোববার) যখন বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজার বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসে, সবার আগে ঘোষণাটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসেছে। আজকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ছিলেন। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। এসব ব্যানার ও কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। সবমিলিয়ে আজকের কর্মসূচি সফল করতে বেসরকারির শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
আরও পড়ুন
- বাংলামোটরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
- জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে
- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ শিক্ষকের সংহতি
পুসাব-এর অধীনে সারাদেশের ১১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত জানিয়ে সাকিন শাদাব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আমরা এক প্ল্যাটফর্মে আসতে পেরেছি। শুধু ঢাকা নয়, আমরা রাজশাহীর বরেন্দ্র কিংবা সিলেট-চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও যুক্ত। একটি চেইন অব কমান্ড গড়ে উঠেছে। সেটা সক্রিয় রয়েছে বলেই আমরা কর্মসূচি দিতে পারছি এবং সফল করতে পারছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে দেশ পরিচালনায়ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি জুলাই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ জাগো নিউজকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা দূর-দূরান্ত থেকে আসে। ফলে কোনো ছুটি বা বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা আবার গ্রামে পরিবারের কাছে ফিরতে বাধ্য হয়। যেমন—হল বন্ধ হলে তারা আর ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টা ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলেও তারা হয়তো মেসে বা বাসা ভাড়া করে থাকেন, তারা থেকে যেতে পারেন।
‘জুলাই আন্দোলনে যখন অবৈধভাবে দেওয়া সিদ্ধান্তে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন কিন্তু প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরেনি; বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিল পাবলিকের শিক্ষার্থীরা। তখন সাহসিকতার সঙ্গে সেই শূন্যতা পূরণ করে রাস্তায় প্রতিরোধ গড়েছিল প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তাদের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের) বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’
প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা স্বার্থপর কথাটা ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আগে বলা হতো প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা, খাওয়া-দাওয়া ও আরাম-আয়েশ ছাড়া দেশ-দশের প্রয়োজনে কাজে আসে না। সেটা যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, তা তো এখন প্রমাণিত। আমার মনে হয়, চব্বিশের জুলাই আন্দোলন বহুদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে রাখবে। তারা দেশ-জাতির প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে। রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চলতে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিরদাঁড়া সোজা করে রাখতে লড়ে যাবে।
এএএইচ/এমকেআর/এমএস