‘নাইজা স্পিরিট’ ফেরির ডিজাইন করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বুয়েট টিম

পরিবেশবান্ধব, টেকসই, নিরাপদ, অত্যাধুনিক ফেরি ‘নাইজা স্পিরিট’-এর ডিজাইন করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের টিম ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওএফএসএ) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার ১২তম আসর। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে এ সাফল্য অর্জন করে বুয়েট টিম।
চ্যাম্পিয়ন বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’র সদস্যরা হলেন- মো. সাফায়েত হোসেন শিশির (দলনেতা), মো. আব্দুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান শাহেদ, আফিফ বিন হাবিব অমি, মো. আতিকুর রহমান ও মো. কাউসার মাহমুদ জিদান।
এর আগের ১১তম, দশম এবং নবম আসরেও টিম ব্ল্যাক পার্ল যথাক্রমে দ্বিতীয়, অনারেবল মেনশন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল। ফলে ধারাবাহিক সাফল্যের অংশ হিসেবে এবার প্রথম স্থান অর্জন করে বুয়েট টিম।
জানা যায়, ১২তম আসরে বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবায়ের ইবনে আওয়ালের তত্ত্বাবধানে সাত সদস্যের দল ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। যা বুয়েট ও বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় অর্জন। তাদের পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী ডিজাইন ও সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয়েছেন বিচারকরা।
এদিকে, প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ইন্দোনেশিয়ার শিপবিল্ডিং ইনস্টিটিউট অব পলিটেকনিক সুরাবায়া। যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে আইটিএস ইন্দোনেশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করায় বুয়েটের টিম ব্ল্যাক পার্ল পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার পেয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানের জন্য বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার এবং ১ হাজার মার্কিন ডলার।
টিম ব্ল্যাক পার্লে সদস্য আবু রাসেল বলেন, প্রতিযোগিতায় ফেরির রুট, যাত্রী সংখ্যা ও ধরন নির্দিষ্ট করা থাকে। এবারের আসরে রুট ছিল নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের অভ্যন্তরীণ জলপথ ইকোরোভু টার্মিনাল থেকে সিএমএস। লাগোস নাইজেরিয়ার একটি অধিক জনবহুল শহর। অত্যধিক জনবহুল হওয়ায় তাদের পরিবহনব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ব্যাঘাত ঘটে।
তিনি বলেন, লাগোস শহরের বাসিন্দাদের এ সমস্যা দূর করতে লাগোস শহরের ইকোরোভু থেকে সিএমএস ২৫ কিলোমিটার জলপথের জন্যে ফেরি ডিজাইন করাই ছিল মূল বিষয়বস্তু, যা একই সঙ্গে ২০০ জন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এবং বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।
দলের আরেক সদস্য আফিফ বিন হাবিব অমি বলেন, আমাদের ডিজাইন করা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত নাইজা স্পিরিট ফেরিটি নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। পাশাপাশি হালকা ও দৃঢ় কাঠামোর জন্য ফেরির কাঠামোটিতে অ্যালুমিনিয়াম দেওয়া হয়েছে। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতল ক্যাটাম্যারান ফেরিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে রিচার্জেবল ব্যাটারি।
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সৌরবিদ্যুৎ এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থাকবে, যা পরিবেশে ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে দেবে। রিচার্জেবল ব্যাটারিকে চার্জিং করতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট। ডিজাইন অনুযায়ী একটি চার্জিং স্টেশন ইকোরোভু টার্মিনালে স্থাপনের জন্যে প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ডব্লিওএফএসএ বিশ্বজুড়ে ফেরি দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে নিরাপদ ফেরি ডিজাইন ও পরিচালনার কাজ করে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ফেরি ডিজাইন করা ছাড়াও পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা ও সংকট মাথায় রেখে ফেরি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপদ ফেরি ডিজাইনের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যেই এ সংস্থা প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এএএইচ/এমএএইচ/