বিক্রি হবে দুই কোম্পানির বন্ধকি শেয়ার
ফেব্রুয়ারিতেই বকেয়া বেতন পাবেন বেক্সিমকোর কর্মীরা

বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকের বন্ধকি শেয়ার বিক্রি করে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বেক্সিমকোর কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন জানান, বেক্সিমকোর লে-অফ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের বেতন দিতে ৫৫০ কোটি থেকে ৬০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। শেয়ার বিক্রি করে এত টাকা না এলেও সরকার এসব বেতন-ভাতা ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করবে।
উপদেষ্টা জানান, ১২টি ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এছাড়া অস্তিত্ব না থাকা ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বেক্সিমকোর সব মিলিয়ে দিন ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। এ সমস্ত ঋণ খারাপ ঋণ কি না সেটা আমরা ব্যাংককে জিজ্ঞেস করবো।
তিনি বলেন, এসব ঋণের বিষয়ে তদন্ত হবে। বিশেষ করে এই টাকাগুলো কীভাবে নেওয়া হয়েছে। আমরা যে হিসাব পাচ্ছি সেই হিসাবে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ চুরি কেলেঙ্কারি থেকেও এটি বড় কেলেঙ্কারি। এই টাকাটা আমাদের টাকা, আপনাদের টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যাংকে রেখেছিল লোকজন, সেখান থেকে উজাড় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করা হবে। যারা যারা এর সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেক্সিমকোর লে-অফ করা কোম্পানিগুলো বন্ধ করা হবে। আইনানুগ পাওনাগুলো ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- আরও পড়ুন
- একের পর এক কারখানা বন্ধ, বাড়ছে বেকারত্ব
- বেক্সিমকোর ৪০ শতাংশ কর্মীর অস্তিত্ব নেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা
- বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ
তিনি জানান, বেক্সিমকোর লে-অফ করা কোম্পানিগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় রিসিভারকে বরখাস্ত করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করবে। রিসিভার পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কীসের ভিত্তিতে এবং কী কী ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে সে বিষয়ে ফেব্রুয়ারির মধ্যে অডিট করে বিভাগীয় এবং আইনান পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আগামী রোববার বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), অর্থ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সভা করে বেক্সিমকো ফার্মা এবং শাইনপুকুর সিরামিকসের বন্ধকি শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা করবে। অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অর্থ বিভাগ থেকে আমরা যে টাকাটা পাবো, শ্রমিকদের গ্র্যাচুয়িটি সার্ভিস বেনিফিটসহ আইনে যা যা আছে তা পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, ৫৫০ কোটি থেকে ৬০০ কোটি টাকা লাগবে। শেয়ার বিক্রি থেকে এ টাকা আসুক আর না আসুক আমরা তা পরিশোধ করবো। হয়তো অর্থ বিভাগ থেকে জোগাড় করবো। বেক্সিমকোর দু-একটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে সেগুলো পরে বিক্রি করা যায় কি না অন্যরা তা দেখবে।
শেয়ারবাজারে বেক্সিমকোর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত থাকলেও মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে কি না- এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এ টাকা ওঠানোর জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট।
বৈঠকে বেক্সিমকো নিয়ে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
১. বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফ করা কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে। শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
২. বেক্সিমকোর লে-অফ করা কোম্পানিগুলোর বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘোষণা টিভি স্ক্রলে প্রেরণের ব্যবস্থা না করায় অর্থাৎ কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় রিসিভারকে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক।
৩. রিসিভার পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
৪. বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপ্রদানকারী জনতা ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কীসের ভিত্তিতে বা কী কী ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে এবং অনিয়ম হয়েছে কি না- সে বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৫. বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আগামী রোববার, বিএসইসি, এফআইডি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ সভা করে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুরের বন্ধকি শেয়ার বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অর্থ বিভাগ পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এমএএস/বিএ