বেড়েই চলেছে খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার দাম

নেই উৎপাদন, কারখানাও বন্ধ। ব্যবসা না থাকায় লোকসানর মধ্যে পতিত হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমন এক প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় কোম্পানিটির স্থান হয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপে। এমন পচা কোম্পানির শেয়ার দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে।
কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে কয়েক দফায় সতর্ক বার্তাও প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েই চলেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল এই পচা কোম্পানিটির শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির বিপুল শেয়ার কেনার আদেশ দেয়। ফলে সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে এবং ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষস্থানটি দখল করেছে লোকসানে নিমজ্জিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা এই কোম্পানি।
গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৭ টাকা ১০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
শুধু গত সপ্তাহ নয়, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহেও কোম্পানিটির শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। ১৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১৭ টাকা ১০ পয়সা উঠে। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বাড়ে ২৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
অন্যভাবে বলা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা ৭০ পয়সা বা ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। আর সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৬ কোটি ২৪ লাখ ৮ হাজার টাকা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারায় পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির স্থান হয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপে। এমনকি কোম্পানিটি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে না। সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান করে ১১ পয়সা।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা এবং নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে ডিএসই। ডিএসই থেকে জনানো হয়, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পিছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এদিকে ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসই থেকে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে ডিএসইর প্রতিনিধিদল দেখতে পায়, কোম্পানিটির কার্যক্রম এবং উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রেক্ষিতে এই তথ্যটি প্রকাশ করেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে ডিএসই। এরপরও শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তার কাছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার আছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার আছে।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের পরে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই কোম্পানিটিও জেড গ্রুপের। ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল।
এছাড়া গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- কহিনুর কেমিক্যালের ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ১৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, ঢাকা ডাইংয়ের ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ, ড্রাগন সোয়েটারের ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং সিকদার ইন্স্যুরেন্সের ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এমএএস/এমআইএইচএস