সার্ভার আপগ্রেডেশন চলছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধে গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সার্ভার আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে। এতে বন্ধ আছে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তবে গ্রাহকের কাছে কোনো তথ্য না থাকায় সঞ্চয়পত্র কিনতে ব্যাংকে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। প্রায় পাঁচ দিন ধরে তারা ঘুরছেন, পাচ্ছেন না কোনো তথ্য। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।

অধিদপ্তর বলছে, সার্ভার আপগ্রেডেশনের কাজ চলমান থাকায় সাময়িক বন্ধ রয়েছে বিক্রি। মন্ত্রণালয় থেকে কাজ হচ্ছে, যে কোনো সময় সার্ভার চালু হবে, আগের মতোই কিনতে পারবেন গ্রাহকরা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিগত চার দিনের মতো আজ মঙ্গলবারও (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে দেখা যায় নারীসহ একাধিক গ্রাহককে। তাদের সবাই এসেছেন সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য, কেউ এসেছেন ভাঙানোর জন্য। আবার কেউ এসেছেন তথ্য (কবে ঠিক হবে সার্ভার) জানার জন্য। তাদের অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করছেন। কারণ হেল্পডেস্ক থেকে ফর্ম পূরণে সহায়তা করা হলেও সার্ভার চালুর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই কর্মকর্তাদের কাছে। তারা বলছেন, সঞ্চয় অধিদপ্তর সার্ভার চালু করলে আমরা ফরম জমা নিতে পারবো।

বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল অফিসের এক অতিরিক্ত পরিচালক জানান, ‘গত বুধবার থেকে সার্ভার ডাউন। কবে ঠিক হবে, আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। সার্ভার ঠিক হলে সবাই সেবা পাবেন। তবে সার্ভার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ফর্ম নিতে পারছেন, জমা হচ্ছে না। কেউ চাইলে কাউন্টারে রেখে দিতে পারেন, সার্ভার ঠিক হলে আমরা জমা করে নেবো। সার্ভার ঠিক হওয়া অধিদপ্তরের কাজ, বলছিলেন তিনি।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সুলাইমান এসেছেন পুরান ঢাকা থেকে। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, এখন জমা দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার এসেছিলাম কিন্তু জমা দিতে পারিনি। আজ আবার এসেছি, কিন্তু জমা নিচ্ছে না। অফিস থেকে বলা হচ্ছে কাউন্টারে রেখে দিতে পারেন। কিন্তু কার কাছে রাখবো, এখানে তো চেক আছে, আবার কোনো টোকেনও দেওয়া হবে না। আবার কবে সার্ভার ঠিক হবে সেটাও জানাতে পারছে না। এভাবে সময় অপচয়ের মানে হয় না।’

শাহ আলম নামে একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমি আগে থেকে কোন বার্তা পাইনি। এর আগেও আমার সঞ্চয়পত্র কেনা রয়েছে। নতুন করে পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছি কিন্তু জমার দেওয়ার জন্য দুই দিন ধরে ঘুরছি। কোনো তথ্যও পাচ্ছি না কবে নাগাদ সার্ভার ঠিক হবে। ব্যাংকের গ্রাহককে মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু অধিদপ্তর আমাদের জানায়নি। এ কারণে গতকালের মতো আজও ঘুরছি।’

সাবেহা সুলতানা এসেছেন ফর্ম নিতে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলের বউয়ের নামে কিছু সঞ্চয়পত্র কিনবো। গত বৃহস্পতিবার এসেছিলাম বলেছিল সার্ভার ডাউন, আসলাম বলে সার্ভার ডাউন। কবে সার্ভার ঠিক হবে এটা জানাতে পারছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা, আমরাও আশা নিয়ে আসছি সার্ভার ঠিক হবে বলে।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও জনসংযোগ) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভারের পুরো কাজটা অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটা প্রজেক্ট। এটা অর্থ বিভাগের ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেখান থেকে কাজ চলছে।’

সোমবার জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও জনসংযোগ) এবং উপসচিব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সার্ভার আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সোমবার দুপুরের পর থেকে চালু হবে। সবাই সেবা নিতে পারবেন বলে আশা করছি।’

এদিকে, চলতি মাস থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিমের ধরন অনুযায়ী) মুনাফার হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) অনুরোধ করেছে। অর্থ বিভাগের তৈরি এ বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সুপারিশটি এসেছে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) থেকে। যাকে সহায়তা করেছে অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অণুবিভাগ।

মুনাফার এ হার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্ধিত হারের কারণে কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা (১২.২৫ শতাংশ) পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। সবচেয়ে বেশি মুনাফা (১২.৫৫ শতাংশ) পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। সুদহার পরিবর্তনের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে পাঠানো চিঠিতে। বর্তমানে ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি, এই তিন ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপে আলাদা মুনাফার হার রয়েছে। তবে নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আর অপর ধাপে ধাপে এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা থাকবেন।

ইএআর/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।