নোভারটিসের ২৩০ কোটির শেয়ার হস্তান্তর ঠেকাতে গভর্নরকে আইনি নোটিশ
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১০ লাখ শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ তিনজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইক্তান্দার হোসাইন হাওলাদার এ নোটিশ পাঠান। গভর্নর ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের ডেপুটি গভর্নর ও পরিচালককে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬টি শেয়ার বিক্রির চেষ্টা চলছে। শেয়ারগুলো ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে বিক্রির প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এরই পূর্বে কেনা-বেচার প্রক্রিয়াটি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সম্পন্ন করার কথা ছিল।
কিন্তু ৫ আগস্টের পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে।
সালমান এফ রহমানের অবর্তমানে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বর্তমানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভাল করছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য বিবেচনায় না নিয়ে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে অতিরিক্ত বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রকৃত বাজারমূল্য ব্যতিরেকে অনাবাসী শেয়ার ধারকদের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এবং ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ এর অধীনে অপরাধ। সুতরাং ওই সম্ভাব্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে আপনাদের দায়িত্ব সর্বাধিক।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং আলোচ্য অনাবাসী শেয়ার ধারকের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য প্রদর্শন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করার চেষ্টা করছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই অর্থ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি বিগত সরকারের সর্বশেষ একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, আলোচ্য চুক্তির আলোকে এরই মধ্যে অনাবাসী পরিচালকদের দায়দেনা যা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, গুলশান শাখা, ঢাকা, গ্রহণ করেছে এবং উল্লেখিত শেয়ার বিক্রয়কারী অনাবাসী পরিচালকদের দায়দেনা ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১’ এর ২৭ ধারার ‘ক’ অনুযায়ী অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে আপনার দপ্তর ‘বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ’, ‘বিনিয়োগ ও শেয়ার হস্তান্তর শাখা’ থেকে আলোচ্য শেয়ার বিক্রির বিপরীতে বিক্রয়লব্ধ অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে অনাপত্তিপত্র চেয়ে আবেদন করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এই শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় শেয়ারের প্রকৃত বাজারমূল্য অপেক্ষা অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আপনার দপ্তর কর্তৃক তা অনুমোদিত হলে অতিরিক্ত অর্থ যা শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নয় তা বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাবে, যা আলোচ্য ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হবে।
নোটিশে বলা হয়, এই শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া যথাযথভাবে যাচাই করা একান্ত আবশ্যক। এমতাবস্থায় আপনার দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন না দেওয়া এবং শেয়ার বিক্রির অর্থ বিদেশে পাঠানো সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমএএস/এমকেআর