‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে অর্থনীতি সচল রাখতে হবে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে লাগবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আবার মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক পর্যায়ে না এলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। এমন দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে অর্থনীতি। এই দুষ্টচক্রের মধ্যেই আসছে নতুন বছর ২০২৫ সাল।

নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থান বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা, ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানোসহ নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

‘আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছি, নতুন বছরে সেগুলোই কন্টিনিউ থাকবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর রিজার্ভের পতন। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সমস্যা আছে। পরিবহন খাতের নানান সমস্যা, ব্যাংকখাতের নানান সমস্যা, খেলাপি ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ আগামী বছর কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে।’- অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

তারা বলছেন, অর্থনীতি একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। যেমন বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমদানি বাড়াতে হবে। আবার আমদানি বাড়াতে গেলে রিজার্ভের পতন হবে। তখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমে যাবে। সেটা মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে। এ ধরনের নানান সমস্যা আগামীতে আসতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে।

‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

এদিকে গত ১০ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বলা হয়েছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি চার শতাংশ অর্জিত হতে পারে। অর্থনীতি ঠিকমতো না চললে প্রবৃদ্ধি হবে তিন দশমিক দুই শতাংশ এবং খুব ভালো করলে হবে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক যখন এই পূর্বাভাস দেয় তখন অর্থবছরের মাত্র সাড়ে তিন মাস পর হয়। এরই মধ্যে অর্থবছরের ছয় মাস শেষ হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর রাজনৈতিক গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েই চলছে। এই অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২৫। নতুন বছরের প্রথম ছয় মাস থাকবে চলতি অর্থবছরের মধ্যে।

চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। অর্থনীতি ঠিকমতো না চললে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং খুব ভালো করলে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।- বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট

চলতি বছরের ছয় মাস এবং আগামী বছরের ছয় মাস নিয়েই বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই পূর্বাভাসে অর্থনীতির জন্য চারটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বহিস্থ খাতের চাপ। বহিস্থ খাতের চাপের মূল কারণ প্রয়োজনের তুলনায় কম রিজার্ভ।

এ পরিস্থিতিতে নতুন বছরে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো কী হবে- এমন প্রশ্ন রাখা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের কাছে। এর উত্তরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছি, নতুন বছরে সেগুলোই কন্টিনিউ থাকবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর রিজার্ভের পতন। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সমস্যা আছে। পরিবহন খাতে নানান সমস্যা। ব্যাংকখাতে নানান সমস্যা, খেলাপি ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ আগামী বছর কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে।’

‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি স্থিতিশীল না থাকে তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে না, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে না। রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

‘আমি মনি করে অতীতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, সেটা পাবেন না। এখন হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সবার জন্য সমান নীতি থাকবে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বড় ব্যবসা করবে, এটা হবে না। টাকা-পয়সা লোপাট বন্ধ হবে।’- আইসিবি চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ

চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়- জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমদানির গ্রোথ ভালো নয়। আমদানির গ্রোথ না হলে উৎপাদন হয় না। আবার দেশে আমদানির গ্রোথ হলে রিজার্ভের পতন হবে। তখন মুদ্রারবিনিময় হার বেড়ে যাবে। সেটা আবার মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে। এ সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়কে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে।’

নতুন বছর অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন নিশ্চিত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ আছে। তবে অর্থনীতির জন্য গুড সাইন আছে। দুর্বল ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো শুধু কাগজ দিয়ে টাকা নিয়ে নেওয়া বন্ধ হয়েছে।’

সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ও সাবেক এই অর্থ সচিব বলেন, ‘পলিসিগুলো পরিবর্তন হচ্ছে, তার সুফল পেতে একটু সময় লাগবে। তবে ভালো দিক এখন দেখা যাচ্ছে। ডলার রেট আগের মতো বাড়ছে না। রেমিট্যান্স গ্রোথ ভালো। রপ্তানি আয় বাড়ছে। আমদানিও বাড়ছে। আগে ডলারের সমস্যার কারণে এলসি করতে পারতো না, এটা এখন মোটামুটি সহজ হয়ে আসছে। সরকারের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্মুথ হয়ে আসছে। আগের তুলনায় পেমেন্ট এরিয়াও কমছে।’

‘মূল্যস্ফীতি সহ্য করা যেত, যদি আপনার আয় বাড়তো। ভালো কর্মসংস্থান যদি সৃষ্টি না হয় তাহলে তরুণদের বেকারত্ব সেটা থেকে যাবে। বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য নতুন বিনিয়োগ দরকার এবং সেটা কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বিনিয়োগ দরকার।’- শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী বছর অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি কমানো। সেই সঙ্গে বিদেশিদের আস্থা লাগবে এবং ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে হবে। ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে হলে সুদের হার কমাতে হবে। সুদের হার কমালে বিনিয়োগ বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অতীতে বড় বড় ব্যবসায়ী যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, সেটা পাবেন না। এখন হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সবার জন্য সমান নীতি থাকবে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বড় ব্যবসা করবে, এটা হবে না। টাকা-পয়সা লোপাট বন্ধ হবে।’

অধ্যাপক আবু আহমেদ আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে, এখন অঅর সেগুলো হবে না। লুণ্ঠন তো বন্ধ হয়েছে। পুঁজি পাচার বন্ধ হয়েছে। রপ্তানি বাড়ছে। সামনে আমাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। টাকা তার মূল্য ধরে রাখতে পারবে। আমি মনে করি অর্থনীতি সামনে এগিয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠবে। মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।’

‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

আগামী বছর অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ কী? এই প্রশ্নের জবাবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই প্রশ্নের ছোট উত্তর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আগামী বছর তো অনেক ধরনের প্রত্যাশা আছে। কেউ কেউ বলছেন- আগামী বছর নির্বাচন হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- রাজনৈতিক সংস্কার, যেগুলো সবাই বলছেন। কিছু মৌলিক সংস্কার করে তারপর নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা সম্ভব। এর আগে একটা রোডম্যাপ হয়তো তারা দেবে জানুয়ারিতে।’

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যেমন- পত্রিকায় এসেছে ১৩ ডিসেম্বর বিএনপি (মির্জা ফখরুল) বলেছে, রাজনৈতিক দলকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। এগুলো তো স্থিতিশীলতা রাখতে সহায়ক হবে না, এ ধরনের যদি মতবিরোধ থাকে এবং এগুলো যদি আরও গভীর হয়...।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা পরিষ্কার পথ বা নকশা কেউ যদি সামনে দেখতে না পারেন, তাহলে আমাদের এক্সপোর্টের (রপ্তানি) যারা ক্রেতা, আমাদের বাণিজ্যে যারা ঋণ দেন এবং দেশের বিনিয়োগকারী, যাদের বিনিয়োগের আগ্রহ আছে, দেশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চান বা সরাসরি বিনিয়োগ করতে চান তারা তো ভরসা পাবেন না।’

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থনীতি থেমে থাকে না। বিষয়টি হলো, এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি একটা বড় সমস্যা। এটা এভাবে চললে তো মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে এবং সেটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ভালো হবে না। সেটার সুযোগ নেবে অনেকে। কারণ আপনার পেটে ক্ষুধা থাকলে কেউ ডাক দিলেই রাস্তায় নেমে পড়বে। কারণ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, কিছু একটা তো করতে হবে। এটা একটা দুষ্টচক্রের মতো হয়ে গেছে। অর্থনীতি যদি সচল রাখা যায় এবং কর্মকাণ্ডগুলো ঠিকমতো চলে, তাহলে মূল্যস্ফীতি একটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। আবার মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক পর্যায়ে না এলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। সেটা হলে অর্থনীতি সচল হবে না। মানে একটা চক্রের মতো হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে হয় এখানে শুরুটা হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের মূল চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অর্থনৈতিক দিক থেকে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। সেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতিই বড় চ্যালেঞ্জ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গত দুই মাসে কমেছে কিছুটা। খানিকটা কমেছে, অত উল্লেখযোগ্য না, তবে বাড়েনি। কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি তো ১৪-এর কাছাকাছি চলে গেছে। দরিদ্র মানুষের জন্য জীবিকার সংকট এটা।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় পুরোনো কৌশলও চালিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুরোনো কৌশল মানে পুলিশি কায়দায় বাজার ব্যবস্থাপনা করা, এটা থেকে আমরা কখনো সুফল পাইনি। যেখানে পুলিশি কায়দায় পদক্ষেপ দরকার, সেটা হলো চাঁদাবাজি বন্ধের ক্ষেত্রে। ওটাও মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে। ওই জায়গায় আপনি পুলিশি অ্যাপ্রোচ নেন। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে গিয়ে ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের ডান্ডাবাজি করে, ওদের জরিমানা করে..., বাজার কারসাজিতে তো ওদের ওই সক্ষমতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনায় যে পর্যায়ে সমস্যা আছে- তা হলো পাইকারি পর্যায়ে এবং আড়তদার-মিলার পর্যায়ে। হোলসেল লেভেল বা স্টক যেখানে করছেন বা মিলার পর্যায়ে, আমদানি পর্যায়ে বড় বড় যারা খেলোয়াড় আছেন, তারা জোটবদ্ধ হয়ে মাঝেমধ্যে কারসাজি করে বাজার উঠিয়ে দেন (দাম বাড়িয়ে দেওয়া), আর সরবরাহ ভালো থাকলেও দাম কমতে দেন না। এখানে প্রতিযোগিতার পথ মসৃণ করতে হবে। প্রতিযোগিতার পথ মসৃণ করা মানে বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কোন বাজারে কী পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে, কত দামে লেনদেন হচ্ছে, গুদামে কত আছে- এই তথ্যগুলো একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত তুলে ধরতে হবে। আইনি ব্যত্যয় ঘটলে আইন প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সহ্য করা যেত যদি আপনার আয় বাড়তো। ভালো কর্মসংস্থান যদি সৃষ্টি না হয়, তাহলে তরুণদের বেকারত্ব সেটা থেকে যাবে। বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য নতুন বিনিয়োগ দরকার এবং সেটা কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বিনিয়োগ দরকার। আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিনিয়োগ দেখেছি, কিন্তু কর্মসংস্থান দেখিনি। যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে নতুন বিনিয়োগ আসবে। পলিসি ঠিক থাকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বিনিয়োগই হবে।’

‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘রিজার্ভে গত দু-তিন মাসে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। রেমিট্যান্সের বৃদ্ধিটা বেশ ভালোই, ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এখন তো মাসে ২২০ কোটি ডলার, এটাই একটা স্বাভাবিক লেভেল (পর্যায়) হয়ে গেছে রেমিট্যান্সের। তার সঙ্গে সঙ্গে এক্সপোর্টের যে টাকা ধরে রাখতো, সেই ধরে রাখার প্রবণতা কমেছে। তারপরও একেবারে স্বস্তি চলে এসেছে তা নয়। রেমিট্যান্সের প্রবাহে যে উন্নতি, আমার মনে হয় এটার বড় কারণ হুন্ডির বাজারে মন্দা যাচ্ছে। কারণ অর্থপাচার যারা করতো তারা নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে। আর যারা পাচার হয়নি, তারা দেশে আত্মগোপনে আছে। এখন তো ওদের ওই সুযোগ (অর্থপাচার করা) নেই।’

তিনি বলেন, ‘আবার নতুন পাচারকারীরা যেন আসতে না পারে, সেজন্য পাচারের পথগুলো বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল এবং দুর্নীতি দমন কমিশন যদি আরও সচল হয় এবং ওখানে যদি আমরা সরিষার মধ্যে ভূত তাড়াতে পারি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসবে।’

‘দুষ্টচক্রে’ অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বড় চ্যালেঞ্জ

সামনে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এখনো তো নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ক্রেতারা কনফিডেন্স (আস্থা) পান না, আপনি ডেলিভারি (সরবরাহ) দিতে পারবেন কি না সময় মতো। ওই কনফিডেন্স না পাওয়ার প্রধান কারণ তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন, কী ঘটবে না ঘটবে। হঠাৎ করে রাস্তাঘাট, বন্দর চলবে কি না (বন্ধ হবে কি না)। এজন্যই বলছিলাম প্রধান চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটা মূল্যস্ফীতি বলেন, রেমিট্যান্স বলেন, অর্থপাচার বলেন বা রপ্তানি- সব ক্ষেত্রে কিন্তু এটা (রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা) একটা বড় বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ এমনিতেই আসবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ করতে যেসব প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয় তা সহজ করতে হবে। নতুন বিনিয়োগ রেজিস্ট্রেশন লাগবে, বিডাতে যেতে হবে, এনবিআরে যেতে হবে, বিদ্যুতের সংযোগ লাগতে পারে, এই যে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে হয় এবং বিভিন্ন ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়, শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স লাগে, পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স লাগে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স লাগে, এই প্রক্রিয়ায় কিন্তু প্রচুর সময় যায় এবং জটিল। এখানে অনেক ঝঞ্ঝাট আছে, খামোখা। ওগুলো পরিষ্কার করতে হবে।’

এমএএস/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।