২০২৫-এর বর্ষপণ্য হচ্ছে আসবাবপত্র, রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

ইব্রাহীম হুসাইন অভি
ইব্রাহীম হুসাইন অভি ইব্রাহীম হুসাইন অভি
প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজারে সরব উপস্থিতির জন্য আসবাবপত্রকে ২০২৫ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন বছরের প্রথম দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তখন ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে।

২০২৫-এর বর্ষপণ্য হচ্ছে আসবাবপত্র, রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

কয়েক বছর ধরে সরকার উদীয়মান পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। এ বিশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে ওই খাত বেড়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন নীতিসহায়তা দেওয়া হয়। গত বছর হস্তশিল্পকে বর্ষসেরা পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিল সরকার।

দেশের ফার্নিচার শিল্প সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টরে ২০ লাখের বেশি কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ফার্নিচার শিল্প। কিন্তু গত অর্থবছর বৈশ্বিক অর্থনীতির খারাপ অবস্থা মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি আয় কিছুটা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ফার্নিচার পণ্য রপ্তানি করে ৭৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন আয় করেছে, যা আগের বছর ছিল ৯০ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন।

উৎপাদিত আসবাবপত্রের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। তবু রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ফার্নিচার পণ্য রপ্তানি করে ৭৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন আয় করেছে, যা আগের বছর ছিল ৯০ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন।

বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে ফার্নিচার কুটিরভিত্তিক শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটি নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে কুটিরশিল্প থেকে যান্ত্রিকীকরণের দিকে গিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে রূপান্তরিত হয়। এরপর থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, উদ্ভাবনী নকশা এবং বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহারে আসবাবপত্র ব্যবসা বাড়তে শুরু করে। ফলে দেশীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

২০২৫-এর বর্ষপণ্য হচ্ছে আসবাবপত্র, রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

কাঠ, প্রক্রিয়াজাত কাঠ, মেলামাইন বোর্ড, মিডিয়াম ডেনসিটি ফাইবার বোর্ড (এমডিএফ), আর্টিকেল বোর্ড ও স্টিল থেকে প্রধান জাতের আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের এবং মানসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন বিদেশি ফার্নিচারের পরিবর্তে দেশীয় ফার্নিচার বেছে নিচ্ছে। দেশের ফার্নিচার পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার আসবাবপত্র শিল্পের রপ্তানিতে ৮ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে।

উদীয়মান এ শিল্পে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল হলো কাঠ, প্রক্রিয়াজাত কাঠ, মাঝারি ঘনত্বের ফাইবার কাঠ, স্তরিত বোর্ড, কণা বোর্ড বা পার্টিক্যাল বোর্ড, পেটা লোহা, বাঁশ ও বেত। এসব উপকরণের বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়।

‘অনেক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত চলে যায়, যা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক প্রান্ত খেয়ে ফেলে এবং আমরা সেক্টরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারি না।’- প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল

ফার্নিচার শিল্পের বিকাশে বড় বাধা উচ্চ আমদানি শুল্ক

উচ্চ আমদানি শুল্ক এ শিল্পের বিকাশে বড় বাধা বলে জানিয়েছেন আসবাবপত্র প্রস্তুতকারকরা। ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয় বলে তারা জানিয়েছেন। এতে আসবাবপত্রের দাম বেড়ে যায়। ফলে উৎপাদকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আসবাবপত্র সরবরাহ করা ও রপ্তানির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

‘একটি সেক্টরের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের বিশেষ উদ্যোগ (বর্ষপণ্য ঘোষণা) প্রয়োজন। নিশ্চিতভাবে, এটি খাতটিকে তার রপ্তানি বাজার প্রসারিত করতে এবং আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করবে। তবে কাঁচামালের ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং দক্ষ কর্মীর অভাব এই খাতের জন্য বড় বাধা’ বলে জানান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের রিগ্যাল ফার্নিচার ব্র্যান্ডের অধীনে আসবাবপত্র উৎপাদন ও রপ্তানি করে।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত চলে যায়, যা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক প্রান্তকে খেয়ে ফেলে এবং আমরা সেক্টরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারি না।’

‘আসবাবপত্র একটি লাইফস্টাইল পণ্য এবং এটি ফ্যাশন আইটেমের মতো। এখানে পণ্যের ডিজাইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সরকারকে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে’ বলে জানান কামরুজ্জামান কামাল।

২০২৫-এর বর্ষপণ্য হচ্ছে আসবাবপত্র, রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

আসবাবপত্রকে বর্ষপণ্য ঘোষণা প্রসঙ্গে হাতিল ফার্নিচারের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি আসবাবপত্র শিল্পের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। এটি সেক্টরের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। কারণ সরকারীকরণ কেবল ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং দেশ-বিদেশের বাজারে এ খাতের বিকাশের জন্য নীতিগত সহায়তা প্রদান করবে।’

‘আমরা দেশি-বিদেশি বাজারের জন্য ফার্নিচার পণ্য উৎপাদন করি কিন্তু আমদানি শুল্ক একটি বড় সমস্যা। আশা করি সরকার এটির সমাধান করবে এবং করের হার যৌক্তিক করবে। একটি ব্যবসায়িক সক্ষম পরিবেশ প্রদান করবে।’ যোগ করেন সেলিম এইচ রহমান।

আইএইচও/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।