টিসিবির গাড়িতে মানুষের ঢল, খালি হাতে ফিরছেন অনেকেই
নিম্ন আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল কেনার সুযোগ করে দিতে প্রতিদিন রাজধানীর অর্ধশত জায়গায় ট্রাক সেল কর্যক্রম চালাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির পণ্য কিনতে প্রতিটি জায়গায় মানুষের ঢল নামছে। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই পণ্য কিনতে পারছে না। তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
টিসিবির দায়িত্বশীলরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্পটে (জায়গায়) টিসিবির ট্রাক সেল কর্যক্রম চলছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪০০ জনকে দুই কেজি তেল ও দুই কেজি মসুর ডাল দেওয়া হচ্ছে। টিসিবির ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর বাইরে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ট্রাকে বিক্রি কার্যক্রম চালানো ব্যক্তিরা বলছেন, বিক্রির জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তার পুরোটাই বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ পরিমাণে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন তার থেকে অনেক বেশি মানুষ। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেকেই পণ্য কিনতে পারছে না।
আরও পড়ুন
- ৪৭ লাখ সুবিধাভোগীর স্মার্টকার্ড করতে ডিসিদের সহায়তা চান উপদেষ্টা
- ঈশ্বরদীতে টিসিবির পণ্য নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১৫
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে খিলগাঁও গিয়ে দেখা গেছে পল্লীমা সংসদের সামনে টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। ট্রাকে থাকা এক বিক্রয়কর্মী জানান, মানুষ যে হারে লাইনে দাঁড়াচ্ছে তাতে সবাইকে মাল দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা ৪০০ জনকে মাল দিতে পারবো। তারপর যারা লাইনে থাকবেন তাদের ফিরে যেতে হবে। আমরা ৪০০ জনের বেশি দিতে পারবো না।
খিলগাঁও থেকে সেগুনবাগিচায় এসেও টিসিবির ট্রাকে মানুষে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে ট্রাকে এই বিক্রি কার্যক্রম চলে। এই জায়গায় যখন বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়, তখনো লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ১০০ মানুষ। তারা হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যান।
টিসিবির পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়া আবুল কালাম নামের একজন বলেন, ট্রাক আসার পর আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার আগে অনেকেই লাইনে ছিলেন। দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড়ানোর পরও মাল কিনতে পারলাম না।
তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাজারে তেল, ডালের প্রচুর দাম। টিসিবি থেকে কিনতে পারলে কিছু টাকা সাশ্রয় হয়। কিন্তু কখন কোথায় টিসিবির মাল বিক্রি হয় আগে থেকে জানতে পারি না। আজ হঠাৎ এখানে গাড়ি দেখা লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু লাভ হলো না। এখন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
আমেনা বেগম নামের আর একজন বলেন, আমি দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তেল, ডাল পাইনি। আমার আগে আর ৭-৮ জন ছিল। এমন সময় ট্রাক থেকে বলা হলো আর মাল নেই। কি আর করা, এখন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
সেগুনবাগিচায় টিসিবির পণ্য বিক্রি দায়িত্ব ছিল মেসার্স শতাব্দী জেনারেল স্টোরের। ডিলার হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া মোবাইলফোনে কল দিলে মতিউর নামের একজন বলেন, আমরা যখন পণ্য বিক্রি শেষ করি তখন ৬০-৭০ জনের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাদের যে বরাদ্দ ছিল আমরা তার সম্পূর্ণ বিক্রি করেছি। এখন বাড়তি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেতো আমাদের কিছু করার নেই। আমরাতো বরাদ্দের অতিরিক্ত দিতে পারবো না।
যোগাযোগ করা হলে টিসিবির ট্রাক সেল বিক্রির কার্যক্রম তদারকি করা হুমায়ুন বলেন, চলতি মাস থেকে আমরা প্রতিটি ট্রাকে ৪০০ জনকে পণ্য দিচ্ছি। এটি ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের বাইরের মানুষের জন্য। প্রতিটি অঞ্চলের গরিব মানুষ যাতে পণ্য পায় এ জন্য আমরা আগে থেকেই স্পট উল্লেখ করি না। এক এক দিন এক এক জায়গায় বিক্রি করা হয়।
ফ্যামিলি কার্ডধারীরাও ট্রাক সেল থেকে পণ্য নিচ্ছেন কি না সেটা বোঝার উপায় কি? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ফ্যামিলি কার্ডধারীরাও পণ্য নিচ্ছেন কি না সেটা বোঝার উপায় নেই। ট্রাকে যিনি পণ্য বিক্রি করেন তার পক্ষে কে কার্ডধারী আর কে কার্ডধারী না তা বোঝা সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি এলাকার গরিব মানুষ যাতে পণ্য পায়। এজন্য প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করা হয়। এখন লাইনে বেশি মানুষ দাঁড়ালে আমাদের তো কিছু করার নেই।
এমএএস/এমআইএইচএস