বিদেশে চিকিৎসায় বছরে বাংলাদেশ হারাচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
পিআরআই আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

বিদেশে চিকিৎসায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চলে যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশে গিয়ে ডাক্তার দেখায়। স্বাস্থ্যখাতে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে। আমরা গবেষণা করতে পারছি না। কারণ বিগ ডাটা আমাদের কাছে নেই। যদি থাকতো তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারতাম যে কোনটি বেশি কার্যকর।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ক্রস বর্ডার ডাটা ফ্লো: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘এনাবলিং ক্রস বর্ডার ডাটা ফ্লোজ উইদিন বিবিআইএনএস টুওয়ার্ডস রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

কর্মশালা সঞ্চালনা এবং সূচনা বক্তব্য দেন পিআরআই চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদি সাত্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নিধি পারেখ। প্রবন্ধের বাংলাদেশ অংশ তুলে ধরেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। 

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশে এখন খনির চাইতে ডাটাকে মাইনিং করে যে খনি হয় সেটার দাম অনেক বেশি। কয়লা খনি বা তেল খনি থেকেও ডাটা খনি অনেক বড়। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে। এখানে অনেক ডাটা ক্রিয়েট হচ্ছে। আমাদের মোবাইল সিস্টেম থেকে হচ্ছে, আমাদের ক্ষুদ্র-মাঝারি খাত থেকে হচ্ছে, ট্যুরিজম সেক্টর থেকে হচ্ছে, কিন্তু সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে এর কোনো ভ্যালু আমরা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ডাটাবেজ, ডাটা মাইনিং, ডাটা স্টোরেজসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যদি আমরা উন্নতি করতে পারি তাহলে অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবো। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি কাঠামো তৈরি এবং আচরণগত পরিবর্তন করতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে তথ্য আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে। অনেকটা সাইলোর মতো। যার যার তথ্য তার তার কাছেই থাকে। এমনকি নিজেদের মধ্যেও তথ্য আদান-প্রদান করা হয় না। 

তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চলে যায়। কিন্তু তারা সেই টাকা কোথায় খরচ করে আমরা জানি না। অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশে গিয়ে ডাক্তার দেখায়।

গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংকের তথ্যের ক্ষেত্রেও সরকারিভাবে বলা হয় যে তিনটি ফ্যাসিলিটি রাখা; ডাটা সেন্টার, রিকভারি সেন্টার, ডিসাস্টার রিকভারি সেন্টার, যা ব্যাংকের পক্ষে ম্যানেজ করা অর্থাৎ তথ্যনিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা অনেক কঠিন। এই জায়গায় আমরা সম্মিলিতভাবে আইনগতভাবে কাজ করতে পারি। বিশেষ করে ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যাংকগুলো যদি একসঙ্গে কাজ করে।

তিনি বলেন, আমাদের ডাটা স্টোরেজের কোনো পলিসি নেই। বাংলাদেশে এখনো ডমেস্টিক ক্লাইউড সার্ভিসগুলো সেভাবে ডেভেলপ করেনি। এটা না করলে আমরা তথ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারবো না। সেটা মেডিকেল হোক, ট্যুরিজম হোক বা ফাইন্যান্সিয়াল হোক।

আমাদের আইনগতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে কাজ করতে হবে। যদি স্থানীয়করণ পলিসিগুলো আমরা ঠিকমতো অ্যাডজাস্ট না করি, তাহলে কিন্তু তথ্যের ব্যবহারটা হবে না। যোগ করেন গভর্নর।

পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, তথ্য আদান প্রদানে সবচেয়ে কম সংযুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। রাজনৈতিক সীমানা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানোর আরও সুযোগ আছে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে যা আরও বেশি বাস্তব।  

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পিআরআই গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর মহিবুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. সাব্বির হোসেন প্রমুখ।

এসআরএস/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।