বেক্সিমকো সচল করতেই রিসিভার নিয়োগ: গভর্নর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ছবি: জাগো নিউজ

বেক্সিমকো কয়েক মাস ধরে তাদের শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছিল না। সরকার অর্থ দিয়ে তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। এখন গ্রুপটিতে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাতে গ্রুপটি (বেক্সিমকো) সচল করা যায়।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বণিক বার্তা আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আপনারা গণমাধ্যমে দেখেছেন বেক্সিমকোয় রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। কোনো বিজনেস প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। বেক্সিমকো রিসিভার দেওয়া মানে বন্ধ নয়, বরং এটা সচল করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক মাস বেক্সিমকোর বেতন-ভাতা সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে৷ যে কোনো কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। এটা করা হয়েছে বেক্সিমকো সচল করার জন্য। তারা কয়েক মাস শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারতো না। এখন রিসিভার বসানোর মাধ্যমে সচল করা হবে। একই সঙ্গে বেক্সিমকোর রপ্তানির টাকা যেন বেহাত না হয়। দেশের টাকা যেন দেশেই ফিরে আসে দেখতে হবে।

ব্যাংক নিয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ব্যাংকখাত। তবে দ্রুত সব সমাধান হবে না। আমাদের ব্যাংকখাতে নাজুক অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। দ্রুত সংস্কার বা সমাধান চাইলে আমার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার এসেট এক পরিবার ২৩ হাজার নিয়েছে সেখানে আমার হাতে ম্যাজিক নেই। তবে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না এটা বলতে পারি। দুর্বল ব্যাংকে টাকা তুলতে পারছে না এ কারণে তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সব সমাধানও হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কা হয়ে যাইনি, আমাদের গ্রোথ নেগেটিভ হয়নি। আমরা ঠিক করছি বিনিময় হার, বিনিয়োগ পরিবেশ। আমরা আশাবাদী বিনিয়োগ আসবে, আমরা চাই বিনিয়োগ আসুক। অর্থপাচার নিয়ে তিনি বলেন, দুবৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে, এটা ফিরে পাওয়া কঠিন ছিল। তবে জাল ফেলা হয়েছে এখন গোটানো বাকি। এরই মধ্যে আমরা দেশ ও দেশের বাইরে যোগাযোগ করেছি। আমাদের সহযোগিতার জন্য চলতি সপ্তাহে আমেরিকার প্রতিনিধি আসছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি আসবে, বিশ্বব্যাংক আসবে, সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও কথা হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা শিল্প বন্ধ হয়ে যাক। কারণ সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আবার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবও জব্দ করা হয়নি, হবেও না। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকায় টোটাল ব্যাংকিংয়ের ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৭ শতাংশ বাকিটা অন্য জায়গা। আমরা এটাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এজেন্ট ব্যাংক বড় কাজ করছে, এমএফএস সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। কিন্তু তাদের নগদ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে গত তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হয়নি। কারণ ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবল রাখতে হবে। এটা স্ট্যাবল না হলে কোনো বিনিয়োগ হবে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য যারা ব্যাংকের টাকা মেরেছে তারা ব্যাংকের সাথে থেকে টাকা ফেরত দেয়। বাইরে যে টাকা চলে গেছে সেসব কীভাবে আইনগত প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা যায় সেই চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। আমরা কি শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছি, না। আমাদের গ্রোথ কমেনি। যে কোনো পলিসি ইমপ্লিমেন্ট করলেও মূল্যস্ফীতি এক বছরের আগে কোনো দেশেই কমে না। চার মাস পার করছি আমাকে আরও ৮ মাস সময় দিতে হবে। আমরা শুধু মুদ্রানীতির ওপর নির্ভর করছি না। সব প্রয়োজনীয় পণ্য এলসি খোলা, শুল্ক শিথিল করা হয়েছে।

ফরেন এক্সচেঞ্জ শর্টেজ এখন নেই। আমি মনে করি, সাপ্লাই সাইডে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট নিয়ে আসতে চাচ্ছি। ব্যাংকখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর পাকিস্তানের থেকেও দুর্বল। এটা ঠিক হতে ২-৩ বছর সময় লাগবে।

ইএআর/এসএনআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।