এই সরকার সব সংস্কার করবে তা মনে করার কারণ নেই: দেবপ্রিয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার করে দিতে পারবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশিদের সহায়তায় সব সমস্যার সমাধান করবে, এমনটা যদি ভাবা হয়, তাহলে আমরা ভ্রান্ত জগতে বসবাস করি। এখানে প্রত্যেককে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

সকালে রমনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থনৈতিক নীতিমালা নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের জন্য যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা উপরি কাঠামোর আলোচনা। যে কোনো রাষ্ট্র অর্থনীতির ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়। অর্থনীতিই নির্ধারণ করবে কীভাবে আগাবো। যেসব নাগরিক কাজ করেছেন, আপনারা কি একবারও শুনেছেন ভূমিহীন মানুষের কি হবে? কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য দেবো- এই আলোচনা ওনাদের (সরকার) মধ্যে দেখি না।

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান সরকারের দুটা ধারা। একটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। এই সংস্কারের জন্য কমিশন হচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার। সেই নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলছি। ইসির জন্য শিগগির কোনো একটা সার্চ কমিটি হবে। কিন্তু এর বাইরে রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কার। আমাদের অনুধাবন করার বিষয় হলো ওপরের দুটি ধারার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কী, সেটার জন্য সংস্কার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সংস্কারের দুটা অংশ, একটা জমে থাকা সংস্কার। দ্বিতীয়ত হলো আমাদের উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সংস্কার বলেন আর যাই বলেন, সেখানে যদি স্থিতি না পাই তাহলে আমার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে আগানোর যে গতি দুটাই কিন্তু অন্য রকমভাবে প্রভাবিত হবে। কেউ যদি মনে করেন আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলবো। তবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো তার মতে চলবে, তাহলে আমরা ভুল বুঝতে পারছি।

অন্তর্বর্তী সরকারে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করে দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের প্রকৃত মজুরি রক্ষা করতে হবে, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। একইভাবে সুরক্ষা খাতগুলোও রক্ষা করতে হবে। ছাত্রদের আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা যেন ঠিকমতো চলে সেটা করতে হবে, আইনশৃঙ্খলার সুরক্ষা সবাইকে একই রকম দিতে হবে।

অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে এফবিসিসিআই কমিটি চেয়ার আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে পণ্যের দাম নির্ধারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। ব্যাংকখাতে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। পুঁজিবাজার ও ব্যাংকখাত ঢেলে সাজানো উচিত। দাতা সংস্থার কাছ থেকে সফট লোন নেওয়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া উচিত। কারেন্সি সোয়াপে জোর দেবো না। এটা ভালো ফল এনে দেবে না।

তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম শক্তি প্রয়োগ নয়, সাপ্লাই চেইন ম্যাকানিজমে মনোযোগ দিতে হবে।

বিসিআইর সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ঘুস ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। একটা জেনারেশনকে আমরা নষ্ট করছি। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস এর সভাপতি এম এস শেকিল চৌধুরী বলেন, ব্যাংকটা পলিটিক্যাল পণ্য বানানো হয়েছে। উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিক লিডার হননি, পলিটিক্যাল লিডার হয়েছেন।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজার ঠিক রাখা ও সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে অবকাঠামো করা দরকার। এখনও সনাতনী পদ্ধতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিপণন চলছে। এই জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন।

আরেক সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা, দুর্বৃত্তায়ন দূর না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। ব্যবসায়ীরা গ্যাস পাচ্ছেন না, বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। ডলার সংকটে আমরা এলসি করতে পারছি না। এত চাপ যখন বেসরকারি খাতের ওপর পড়ে, তাহলে আমরা কীভাবে টিকে থাকব জানি না।

শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড লোক দরকার। আমরা সঠিক লোক পাই না। বেসরকারি খাত একটা দুর্নামের মধ্যে পড়েছে। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সবাই সব সমস্যার কথা বলেছেন। কিন্তু সমাধান করবে কে? বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? ঘণ্টা বাঁধার লোক তো সরকারে নেই, এখানেও নেই।

পরিসংখ্যানের তথ্য পুরোপুরি ভুল বলে জানান এই ব্যবসায়ী। বলেন, সব সংস্কার যদি এই সরকার করতে চায়, সেটা তারা করতে পারবে না। রাজনীতিবিদদের একতাবদ্ধ করে পরবর্তী সংস্কারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন বিসিআইর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান সবুর খান, বারভিডার সাবেক সভাপতি আবদুল হক প্রমুখ।

এসএম/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।