যে কারণে পতনের বৃত্তে শেয়ারবাজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
ফাইল ছবি

দুই কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে ফের বড় দরপতন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে এ দরপতন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, নানা কারণে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। একদিকে ব্যাংকের সুদের হার বেড়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীরা বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও মনে করেন, টানা দরপতনের পর বাজার যখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল, ঠিক সে সময় রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে নতুন বিতর্ক ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে আবারও দরপতনের ধারা দেখা দিয়েছে। তবে যে হারে বাজারে দরপতন হয়েছে, তাতে যে কোনো মুহূর্তে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন

গত সপ্তাহের চার কার্যদিবস এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসসহ টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতনের পর গত সোমবার ও মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়।

শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল আন্দোলনকারী। একপর্যায়ে তারা বঙ্গভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলিতে তিনজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (২৩ অক্টোবর) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দাম কমার তালিকা। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মাত্র ৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, এখন ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। ফলে অনেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাংকে জমা অথবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বিশেষ সুবিধা পাওয়া যেসব বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ছিলেন, তাদের সিংহভাগ এখন নিষ্ক্রিয়। ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমে গেছে। যে কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি কমেছে এবং দরপতন হচ্ছে।

ডিএসইর আরেক সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ভেতরে অস্থিরতা দেখা দিলে শেয়ারবাজারে তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাবেই আজ শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এছাড়া সুদের হার বেশি হওয়ায় আগে থেকেই বাজারে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, এখন শেয়ারবাজারে খারাপ দিন গেলেও সহসা সুদিন ফিরতে পারে। যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, ঠিকভাবে এসব সংস্কার করা গেলে অবশ্যই বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক চিত্র ভালো হলে তারও ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে।

আরও পড়ুন

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে অনেক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যথোপযুক্ত সংস্কার হলে সামনে শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বাজার সামনে ভালো হবে, এটি আশা করাই যায়।

এদিকে, লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৯৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ১৩ কোটি ৬৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, টেকনো ড্রাগস, ব্র্যাক ব্যাংক, ফারইস্ট নিটিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১২১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩১টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

এমএএস/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।