অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা তত ভারী হচ্ছে। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বেড়েই চলেছে। দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজারে যেমন দরপতন হচ্ছে, তেমনি ধীরে ধীরে লেনদেনের গতিও কমে আসছে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে। সেইসঙ্গে দাম কামার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে কমেছে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসই পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।

এর আগে গত সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়। তবে চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (৯ অক্টোবার) শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পতনের পাল্লায় ভারী হয়েছে।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দিলে সম্প্রতি একাধিক দিন রাস্তায় মেনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েও দেন একদল বিনিয়োগকারী। সেইসঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করলেও শেয়ারবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এখন লেনদেন কমে তলানিতে নামলো।

মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম লেনদেন ডিএসইতে আর হয়নি।

এমন লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দাম কমেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

লেনদেন খরার বাজারে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৯৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের ১৩ কোটি ৩৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেকনো ড্রাগস।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১১টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।