শেয়ারবাজার
টানা দরপতনে হাহাকার বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একের পর এক বৈঠক করলেও দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন যত যাচ্ছে তাদের হাহাকার ততো বাড়ছে।
গত কয়েক কার্যদিবসের মতো মঙ্গলবারও (৮ অক্টোবার) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটর দাম কমায় দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে।
শেয়ারবাজারে এমন দরপতন দেখা দেওয়ার প্রতিবাদে একাধিক দিন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কয়েক দফায় বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিএসইসি। কিন্তু কিছুতেই দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না।
সর্বশেষ পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানে পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গতকাল সোমবার বিএসইসি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সকে ১৮ দফা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছে বিএসইসি।
এছাড়া মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও পিএইচপি গ্রুপের অধীনে থাকা শক্তিশালী মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে এই তিন শিল্প গ্রুপের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। এর আগে ডিএসই, সিএসই, ডিবিএ, বিএমবিএ ও সিডিবিএলসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করলেও বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। কিন্তু তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।
বরং লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারবাজারে দাম কমার তালিকা বড় হয়। এতে সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ১৬ কোটি ২০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন, অগ্নি সিস্টেম, লাভেলো আইসক্রিম, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মিডিল্যান্ড ব্যাংক, ইউনিক হোটেল এবং এনআরবি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এমএএস/এমকেআর/এএসএম