১০ গুণ বাড়তি ব‍্যয়ের কালুরঘাট রেল সেতু উঠছে একনেকে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পটি বাড়তি ব্যয়েই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তখন একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। এবার প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১০ গুণেরও বেশি।

পরিকল্পনা কমিশনের একনেক উইং সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভার কার্যতালিকায় কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ১০ গুণ বেশি ব্যয় ধরায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকল্পটি আর পাস করা হয়নি। প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগের জন্য কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর মিটারগেজ লাইনবিশিষ্ট রেল সেতুর ওপর দিয়ে স্বল্পগতিতে ট্রেন চলাচল করে এবং ট্রেন চলাচলের সময় সেতুর ওপর দিয়ে সড়কপথের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া এই সেতুতে যানবাহন একমুখী চলাচল করতে পারে। ফলে সেতুর উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ জন্য কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি রেল সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারি অর্থায়নে ২০১২ সালে এসএমইসি ও ডব্লিউআইইসিওএন কোং লিমিটেড এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে।

সরকার সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে ইডিসিএফের নিয়োজিত পরামর্শক আগের ফিজিবিলিটির ভিত্তিতে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ মিটার বিবেচনা নিয়ে ২০১৬ সালে পুনরায় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করে।

এ ফিজিবিলিটি স্টাডির আলোকে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের জন্য প্রণীত প্রকল্পের ডিপিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটির অনুমোদন না দিয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়, প্রস্তাবিত সেতুর সড়ক ও রেল সেতুর জন্য আলাদা আলাদা ডিজাইন প্রণয়ন করে পুনরায় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।

এ নির্দেশনা এবং পরে ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট পয়েন্টে রেল কাম রোড সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার করার ফলে নতুনভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য ইডিসিএফের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর উশিন অ্যান্ড দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন জেভির সঙ্গে পরামর্শক চুক্তি সই করা হয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের মে মাসে চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি দাখিল করে। ওই ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলওয়ের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং দুই লেনবিশিষ্ট সড়কপথের সুবিধা রেখে একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়।

এতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৫৬৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ৭ হাজার ১২৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ২ মিটার করা হয়েছে। আর প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্সের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৮ মিটার আর প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় বেড়েছে ১০ হাজার ৪০২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, প্রকল্পটি ২০১৮ সালে যখন প্রস্তাব দেওয়া হয় তখন এর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৬২ মিটার। বর্তমানে তা ১২ দশমিক ২ মিটার করা হয়েছে। এতে সেতুর উচ্চতাসহ ভায়াডাক্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এর আগে একনেক সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২০১৫ সালের রেট সিডিউল অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান প্রস্তাবে হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুসারে ব্যয় প্রাক্কলন করায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমওএস/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।