রেকর্ড জরিমানার পর শেয়ারবাজারে ধস
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড জরিমানার পর দেশের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। ক্রেতা সংকটে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামে যেমন ঢালাও পতন হয়েছে, তেমনই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিনশো প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে একশো পয়েন্টের ওপরে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে গতকাল মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জরিমানা করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে ৪ কোটি ১ লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার বিজনেসকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, এপোলে ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১ লাখ, এ আর টি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আব্দুর রউফকে ৩১ কোটি, ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
আরও পড়ুন
এই জরিমানার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। আজ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেও বিষয়টি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্ধুতে ছিল।
এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার ধস দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অবশ্য এই ঢালাও দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী আঁশ, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম এবং ইবনে সিনা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমকেআর/জেআইএম