পুঁজি হারিয়ে মারা গেছেন ১১ বিনিয়োগকারী, চাকরি দাবি পরিবারের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেয়ারবাজারে ২০১০ সালে সৃষ্ট মহাধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এরপর অতিবাহিত হওয়া দীর্ঘ ১৫ বছরে পুঁজি হারিয়ে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১১ জন বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এসব বিনিয়োগকারীর পরিবার থেকে একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করাসহ একগুচ্ছ দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শেয়ারবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদ (বিসিএমআইইউএ)।

সংগঠনটির সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, অনেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। সারাজীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করে পথে বসে গেছেন কেউ কেউ। এমন ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ শতাংশ পুঁজির জোগান দিতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে পুঁজি হারিয়ে যে আত্মহত্যার খবর এসেছে, বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি হবে। কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে কারসাজির কারণে সৃষ্ট পতনে বিনিয়োগকারীদের এমন মৃত্যু হওয়াকে কিছুতেই মানতে পারছি না। এ অবস্থায় এ মুহূর্তে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড পুঁজিবাজারকে একটি টেকসই ও গতিশীল বাজার হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করে পারস্পরিক অনাস্থা দূর করে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় ধারাবাহিক মার্কেট পতন ও অযোগ্যতার দায়ভার বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিতে হবে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য না দেওয়া, প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা, কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে কথা বলার সুযোগ না দেওয়া এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে এজিএম সম্পন্ন করে কোম্পানির এজেন্ডা পাস করানোর মধ্যদিয়ে বিনিয়োগকারীদের সর্বপ্রকার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থার নামে চাঁদা আদায় ও এজিএমকে ঘিরে চলমান অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান করে প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অবিলম্বে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, আইনি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইস্যু ম্যানেজাররা মৌলভিত্তি সম্পন্ন ইস্যু না এনে, নাম সর্বস্ব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে অধিক প্রিমিয়ামসহ আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করার পর আর কোনো দায়বদ্ধতা নিতে চায় না। অথচ তালিকাভুক্তির ৩ বা ৬ মাসের মাথায় অনেক কোম্পানি বিভিন্ন অজুহাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ বছরের পর বছর আটকে যায়। এর জন্য দায়ী ইস্যু ম্যানেজারদের চিহ্নিত করে জরিমানা আদায় করে লাইসেন্স বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আতিক ইখতিয়ারসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

>> সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর কারণে শেয়ারধারীরা মূলধন হারাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে।

>> কোম্পানি সম্পর্কিত নন-কমপ্ল্যায়েন্সের জন্য পরিচালকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট জব্দ করে কমপ্ল্যায়েন্স ঠিক করতে হবে। তাহলে লভ্যাংশ বিতরণের অনিয়ম দূর হবে।

>> শেয়ারবাজার সংক্রান্ত সব স্টেকহোল্ডারদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে পারস্পরিক অনাস্থা দূর করে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় ধারাবাহিক মার্কেট পতন ও অযোগ্যতার দায়ভার নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

>> শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজির নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় দেশে ‘পুঁজি বিনিয়োগ আইন’ প্রণয়ন কার্যকর করতে হবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা প্রকৃত লভ্যাংশ না পেলে কিংবা কোম্পানিগুলো প্রতারণার আশ্রয় নিলে যেন আইনি সুযোগ নেওয়া যায় তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। বিএসইসিকে শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে আইনের সময়োপযোগী সংশোধন করতে হবে।

>> বিগত ১৫ বছর কারসাজির কারণে সৃষ্ট পতনে সর্বস্ব হারিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা ও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন তাদের পরিবার থেকে একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।

>> ২০১০ সালের ধসের পর থেকে আজ অবধি পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ পুঁজির যোগানে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পুঁজি রক্ষায় আন্দোলন করতে গিয়ে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় যারা শিকার হয়েছেন তাদের মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে যত টাকা খরচ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

>> শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকটকালে ব্যাংকগুলোকে সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ রাইট শেয়ার ছেড়ে সুবিধামতো সময়ে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজার থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তাই শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নিশ্চিত করার কার্যকর ভূমিকা ও উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে।

>> সবকিছু শুধু আইন দিয়েই হয় না, মানবিক বিষয়টি অনেক সময় আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায়। কারণ আইন যেহেতু মানুষের জন্যই। বর্তমান ধারাবাহিক দরপতনে বিনিযোগকারীরা নিঃস্ব। সুতরাং মানবিক কারণে ফোর্সসেল আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।

>> বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারকে অব্যাহতভাবে গতিশীল রাখার স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিলেই ইক্যুইটি মাইনাস অ্যাকাউন্টগুলো দ্রুত লেনদেনের আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামোয় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলোকে তহবিল বৃদ্ধির জন্য তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে বিএসইসির উদ্যোগ নিতে হবে।

>> অতিদ্রুত বাইব্যাক আইন করতে হবে। কারণ সেকেন্ডারি মার্কেটে মৌলভিত্তি সম্পন্ন অনেক শেয়ারের মূল্য ফেসভ্যালুর কাছাকাছি। এমতাবস্থায় প্রিমিয়ামসহ ইস্যু মূল্যের নিচে শেয়ারদর নামলে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি অথবা মালিককে বাইব্যাক করতে হবে।

>> নতুন কোম্পানির সেকেন্ডারি মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর তাদের সার্বিক কার্যক্রম সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।

>> ‘শেয়ারবাজার বিষয়ক তথ্য ব্যাংক’ গঠন করে বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারবাজার সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করার সহজ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিএসসিইকে ডিএসই ও সিএসই সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।