শেয়ারবাজারে সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ইসলামী ব্যাংক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইসলামী ব্যাংক। সপ্তাহটিতে এ ব্যাংকের শেয়ার দাম একদিকে অস্বাভাবিক বেড়েছে, অন্যদিকে দাম বাড়ার কারণ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ার দামে পতনও হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়া-কমা ও তদন্তের সবকিছুই গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। অবশ্য সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বড় উত্থানই হয়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এ ব্যাংক।

গত সপ্তাহের প্রথম চার কর্যদিবসেই ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ে। এর মধ্যে দুই কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। তবে চতুর্থ কার্যদিবসের লেনদেন শেষ হওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে ডিএসইকে নির্দেশ দেয় বিএসইসি। এরপর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা সংকট দেখা দেয় এবং বড় দরপতন হয়।

এরপরও গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২ হাজার ৪১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সপ্তাহের শুরুতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকা ৪০ পয়সায়।

১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। এর মধ্যে বর্তমানে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৮২ শতাংশ শেয়ারই এস আলম গ্রুপের হাতে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এসব প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বাজারে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ কমে গেছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার আছে তার মধ্যে রয়েছে- সেগুলো হলো জেএমসি বিল্ডার্স, বিটিএ ফিন্যান্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চারস, এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, প্লাটিনাম এনডের্ভাস, এক্সেলশিয়র ইমপেক্স কোম্পানি, গ্র্যান্ড বিজনেস, লায়ন হেড বিজনেস রিসোর্সেস, বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল, আরমাডা স্পিনিং মিলস, কিংসওয়ে এনডের্ভাস, ইউনিগ্লোভ বিজনেস রিসোর্সেস, সোলিড ইনস্যুরেন্স পিসিসি, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হাই ক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ক্যারোলিনা বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস কোম্পানি, ব্রডওয়ে ইম্পেক্স কোম্পানি, পিকস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, এভারগ্রিন শিপিং, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস ও পারসেপ্টা এনডের্ভাস।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই মাসে ইসলামী ব্যাংকের ৩৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। সরকার পতনের পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাদ দেয়। এস আলম সংশ্লিষ্টরা পর্ষদে না থাকায় তাদের শেয়ারকে এখন আর উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। এতে বর্তমানে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

ইসলামী ব্যাংকের পরেই গত সপ্তাহে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে ইসলামিক ফিন্যান্স।

এছাড়া গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- গ্রামীণ ওয়ান : স্কিম টু মিউচুয়াল ফান্ডের ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইলের ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, আইসিসি ইসলামী ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ঢাকা ব্যাংকের ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।