কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সম্ভাবনা অসীম, অর্জন সীমিত
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু দেশীয় রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় এ খাতের অবদান তুলনামূলকভাবে কম। শতভাগ মূল্যসংযোজন ও কাঁচামাল দেশীয় উৎস থেকে পেলেও কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি আয় থেকে বঞ্চিত দেশ।
বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ১১.০২ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১১.৩০। মোট জনশক্তির ৪৫.৪ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত। কিন্তু সে হারে রপ্তানিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না এ খাত। এজন্য যথাযথ অবকাঠামোর অভাব ও প্রযুক্তির ব্যবহারে অযোগ্যতাকে দুষছেন রপ্তানিকারক, উৎপাদক ও বিশেষজ্ঞরা। রয়েছে বীজ, কাঁচামাল ও যুগোপযোগী নীতিসহায়তার অভাব।
রপ্তানির চিত্র
গত অর্থবছর সামগ্রিক রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমলেও কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে অনেকগুণ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ গত অর্থবছর আয় করেছে ৯৬৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করেছিল ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার।
সর্বোচ্চ আয় হয়েছে শুকনা খাবার রপ্তানি থেকে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ২১৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২০০.৭ মিলিয়ন ডলার।
সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ খাতে আয় হয়েছে ১১৩ মিলিয়ন ডলার, আগের অর্থবছরে ছিল ৬১ মিলিয়ন ডলার। তামাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮২ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। গত বছর আয় হয়েছিল ১৬৫ মিলিয়ন ডলার।
ফুল ও ফল রপ্তানি বেড়েছে অনেক গুণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মিলিয়নের রপ্তানির বিপরীতে গত অর্থবছর আয় হয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। মসলা রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ৪২ মিলিয়ন ডলার। অন্য পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৩৬৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৬২.৯ মিলিয়ন ডলার।
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলার ছুয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই বছরে আয় হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে তা ১.১৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৬৩টি ক্যাটাগরির অধীনে প্রায় ৭০০ পণ্য রপ্তানি করে ১৪৫টিরও বেশি দেশে। এই ধরনের পণ্য রপ্তানির সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫০ কোম্পানি।
বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। সেগুলো হলো কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে লাউ, কুমড়া, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম, টমেটো এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য যেমন জুস অ্যান্ড ড্রিংকস, স্ন্যাক্স, বিস্কুট, কালিনারি, কনফেকশনারি, ফ্রোজেন ফুডসসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত, নেপাল, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
অসীম সম্ভাবনা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪৫.৪ শতাংশ এ খাতে নিয়োজিত। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরে আমরা রপ্তানি করছি।
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে সম্ভাবনা অসীম। তবে আমরা এখনো সম্ভাবনার ১ শতাংশও কাজে লাগাতে পারিনি বলে দাবি করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
যদিও রপ্তানিতে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের অবদান বাড়ছে কিন্তু তা সম্ভাবনার চেয়ে ক্ষীণ। দেশের মোট রপ্তানিতে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের অবদান বেড়েছে গত অর্থবছর। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রপ্তানিতে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের অবদান ছিল ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের বাজার ছিল ১২ হাজার ২৪৫ বিলিয়ন ডলার। এটি বার্ষিক ৯ দশমিক ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে ১৯ হাজার ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
বৈশ্বিক বাজারের আকারের তুলনায় কৃষিপণ্যে আমাদের রপ্তানি খুব ছোট। গত অর্থবছরে আয় ছিল ৯৬৫ মিলিয়ন ডলার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৫২.৫ বিলিয়ন ডলার ও ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী। প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা সম্ভব হলে বৈশ্বিক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশ আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির প্রধান সমস্যাগুলো
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুসারে, প্রাথমিক কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪তম। শীর্ষে রয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও কৃষিপণ্য উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থানে।
আরও পড়ুন
- রপ্তানির তথ্য শিগগির সমন্বয় করা হবে: অর্থ উপদেষ্টা
- দেশে আসেনি ৪০ প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আয়
- ‘দেশে রপ্তানিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সরকারের সুযোগ-সুবিধা খুবই কম’
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের রপ্তানি আয় অনেক কম। এর পেছনে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রধান প্রধান বাধাগুলো হলো কাঙ্ক্ষিত জাতের অভাব, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্যের অভাব, কার্গো বিমানে কৃষি পণ্যের জন্য অপ্রতুল স্থান, প্রয়োজনীয় টেস্ট করার জন্য পর্যাপ্ত ও অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবের অপ্রতুলতা, গ্রহণযোগ্য সনদ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা, পরীক্ষা করতে সময় ও চার্জ বেশি, কোল্ড চেইন সিস্টেমের অনুপস্থিতি এবং আমদানিকারক দেশগুলোর পণ্যবিষয়ক আবশ্যকীয় তথ্য যেমন চাহিদা, বাজারের ধরন, নিয়ম-কানুন ইত্যাদির অভাব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়েছে।
এসব প্রতিবন্ধকতার বাইরেও চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যা রপ্তানিকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা কমে যাওয়া, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় উপকরণের দাম বেশি, ডলারের মূল্য ওঠানামা করা ও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি।
‘টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি। যার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধি খরচ আরও একধাপ বাড়িয়েছে। একটি কনটেইনারের ভাড়া বাংলাদেশে ছয় হাজার ডলার, যা ভারতে ৬০০ ডলার’-বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক
সমাধান কীসে?
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রথমে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এই মুহূর্তে বড় সমস্যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তানে এক কেজি চিনি কিনতে প্রায় ৫০ ও ৬৫ টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশে এর দাম ১৪০ টাকা বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক।
অন্যদিকে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি। যার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধি খরচ আরও একধাপ বাড়িয়েছে। একটি কনটেইনারের ভাড়া বাংলাদেশে ছয় হাজার ডলার, যা ভারতে ৬০০ ডলার, বলে দাবি করেন ইকতাদুল হক।
‘কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ক্রমান্বয়ে কমছে। সরকার নগদ প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। ফলে রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় প্রবিধান মেনে চলতে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারছে না।’- বিএফভিএপিইএর উপদেষ্টা কৃষিবিদ মঞ্জুরুল ইসলাম
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) উপদেষ্টা কৃষিবিদ মঞ্জুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অধিক উৎপাদন খরচের কারণে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগী দেশের কাছে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বিমান ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে বিমান ভাড়া ছিল প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকার মধ্যে, এখন তা ৬৫০ টাকা। ফলে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও অন্য দেশ কম দামে পণ্য দিচ্ছে আর আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি।’
এছাড়া রপ্তানিতে সরকারের আর্থিক সুবিধা কমানোর প্রভাব পড়েছে এ খাতের ওপর।
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ক্রমান্বয়ে কমছে। সরকার নগদ প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। ফলে রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় প্রবিধান মেনে চলতে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারছে না বলে জানান মঞ্জুরুল ইসলাম।
কৃষিপণ্যে আগে নগদ প্রণোদনা ৩০ শতাংশ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য, রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা দুই ধাপে কমিয়ে ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করেছে।
অন্যদিকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আগের সময়ের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে। পণ্যের কম দামের কারণে তারা চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, যা চূড়ান্তভাবে জিডিপিতে অবদান হ্রাস করে দেশের কৃষি খাতে আঘাত হানবে, বলে মন্তব্য করেন এ বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন
- এ অর্থবছরে রপ্তানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২.৪ শতাংশ
- সীমান্তে ‘ওয়ান স্টপ পয়েন্ট’ চালু করতে চায় এনবিআর
অবকাঠামো, নিয়মনীতি, সনদ এবং অগ্রাধিকার না পাওয়ার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানিকারকরা কৃষিপণ্য পরিবহনে বিমানবন্দরে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না। নেই পণ্য স্টোর করার পর্যাপ্ত জায়গা। এজন্য বিমানবন্দরে কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের জন্য পৃথক গেট, স্ক্যানার মেশিন ও হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারে প্রবেশ করতে কঠোর প্রবিধান এবং মান নিশ্চিত করতে হয়। এ ধরনের মান সনদ দিতে যে ধরনের ল্যাবরেটরি দরকার, তা বাংলাদেশে নেই। ফলে বিদেশ থেকে সার্টিফিকেট আনতে অনেক খরচ হয় এবং সময় লাগে বেশি।
এ বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্টোরেজ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সম্প্রতি সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (কাব), বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডর্স অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুইটি গুদাম থাকায় তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
‘আমাদের বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। অন্যদিকে সম্ভাবনাময় বাজার হলো জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা যে বাজারগুলোতে প্রবেশ করতে চাই, সেই বাজারের প্রয়োজনীয় মানদণ্ড ও সনদ নিশ্চিত করতে পারি না বিধায় ব্যবসা ধরা কঠিন।’- বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন
‘আমাদের বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। অন্যদিকে সম্ভাবনাময় বাজার হলো জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা যে বাজারগুলোতে প্রবেশ করতে চাই, সেই বাজারের প্রয়োজনীয় মানদণ্ড ও সনদ নিশ্চিত করতে পারি না বিধায় ব্যবসা ধরা কঠিন’, বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাজারে প্রবেশের জন্য যে ধরনের সনদ প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে আমাদের উচিত টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে মনোযোগ দেওয়া। প্রয়োজনে যৌথ বিনিয়োগ করতে হবে।’
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৯ শতাংশ কৃষিপণ্য রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে, ৩২ শতাংশ ইউরোপে, ১৫ শতাংশ এশিয়ায় এবং ৪ শতাংশ কানাডাসহ অন্যান্য দেশে।
উদীয়মান পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য
নারী-পুরুষের সমানহারে কর্মে অংশগ্রহণ এবং নাগরিক জীবনে নানা ব্যস্ততার কারণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে দেশে বিদেশে। ফলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা দেশকে বহুমুখী রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
এ সব খাদ্যের মধ্যে রয়েছে রুটি, বিস্কুট, আলুপুরি, পাঁপড়, কনফেকশনারি পণ্য, নুডলস, জুস, ঝালমুড়ি, চানাচুর জাতীয় শুকনা খাবার, জ্যাম, জেলি, আচার ও পানীয়। এ সব পণ্যের ভোক্তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ প্রায় দুই কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। অন্যদিকে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটান আমাদের পণ্যের ভালো ক্রেতা।
‘আমার ধারণা, কাঁচামাল সোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। কর হারটা একটু বেশি। এটা যদি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হয় এবং সরকার যদি সব ধরনের সার্টিফিকেশন এবং টেস্টিং সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সাব-সেক্টর থেকে রপ্তানি আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।’প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খাদ্যপণ্য হিসেবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। সেখানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটিরও বেশি এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক। ব্যবসার অনুকূলে আমাদের অনেক সুবিধা যেমন সস্তাশ্রম, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, অল্প দামে জমি, কাজের জন্য ভালো পরিবেশ ইত্যাদি আছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে যদি মানসম্মত পণ্য সহনীয় মূল্যে বাজারে আনতে পারি তাহলে আমরা বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানির বড় অংশ দখল করতে পারব।’
ইতোমধ্যে আমাদের এখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি ও ব্র্যান্ড পণ্য আমদানি করছে।
‘তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে যে কাঁচামাল যেমন আটা, ময়দা, চিনি, তেল ইত্যাদি আমদানি করি, তার দাম পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয় এবং ক্রেতাদের আকর্ষণ করা দুরুহ হয়ে পড়ে।’
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘আমার ধারণা, কাঁচামাল সোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। কর হারটা একটু বেশি। এটা যদি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হয় এবং সরকার যদি সব ধরনের সার্টিফিকেশন এবং টেস্টিং সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সাব-সেক্টর থেকে রপ্তানি আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে’, বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অশুল্কগত বাধা রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সনদ দরকার। তারা বাংলাদেশের বিএসটিআইর সনদ গ্রহণ করে না।
আরও পড়ুন
- বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পোশাক শিল্প, কার্যাদেশ হারানোর শঙ্কা
- আর্থিকখাত সংস্কারের কাজটাও অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরু করতে হবে
ভারত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মার্কেট। ভারত বিএসটিআইয়ের কিছু টেস্টিং গ্রহণ করবে বলে চুক্তি থাকলেও তা মানছে না। ফলে এক ধরনের অশুল্ক বাধা তৈরি হয়- দাবি করেছেন রপ্তানিকারকরা। তারা সব ধরনের পণ্যে হারমোনাইজড স্ট্যান্ডার্ড সেট করার দাবি জানিয়ে বলেন, ভারত সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্যের সনদ গ্রহণ করতে হবে। এটা করতে পারলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও বাড়বে।
প্রতিযোগিতা ও রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানিকারকরা ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থা এবং নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সবার জন্য সমান প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া তারা প্রযুক্তি, কোল্ড চেইন সিস্টেম ও স্টোরেজ গ্রহণের বা পণ্যের অখণ্ডতা ও গুণমান সংরক্ষণ করার মাধ্যমে ফসল সংগ্রহের পরে ক্ষতি কমাতে কৃষকদের সহায়তা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ী ও গবেষকদের মতে, প্রতি বছর পেঁয়াজ ২০-২৫ শতাংশ, আম ৩০-৩৫ শতাংশ, কলা, পেঁপে, পেয়ারা ও লিচু ২৫-৩০ শতাংশ, চাল ৮-৯ শতাংশ এবং ডাল ৬-৭ শতাংশ নষ্ট হয় উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে।
এ বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও সম্ভাবনা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য সব বাধা দূর করে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য, আমরা মান নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি। এছাড়াও পণ্যের মান উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছি এবং বাজার সম্পর্কিত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন প্রদান করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছি। অন্যদিকে, রপ্তানি গন্তব্যে রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে আমাদের বাণিজ্যিক শাখা খুবই সক্রিয়।’
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে
কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগ অতীব জরুরি। যদিও বিনিয়োগ বাড়ছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে কৃষি ও মৎস্য খাতে ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৯ মিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে ২৪.৪১ মিলিয়ন ডলার সিঙ্গাপুর থেকে। দ্বিতীয় বেশি এসেছে ১৫ মিলিয়ন থাইল্যান্ড থেকে ও নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য প্রযুক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগ এবং তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন করতে হবে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং এখানে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ পাচ্ছি না। বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও যে ধরনের অশুল্ক বাধা রয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে কর হারের যৌক্তিকীকরণ প্রয়োজন।’
থাইল্যান্ড কৃষি খাতের সর্বোত্তম ব্যবহারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের জিডিপিতে ২৩ শতাংশের বেশি অবদান রাখে কৃষি এবং রপ্তানি থেকে ৩৫ বিলিয়নের বেশি আয় করে। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য বাংলাদেশও থাইল্যান্ডের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিতে পারে।
‘শুধু ব্র্যান্ডিং নয়, রপ্তানিকারকদেরও নতুন বাজার ও ক্রেতার সন্ধান করতে হবে। এজন্য সেক্টরের জনগণ এবং সরকারকে পুনর্গঠন ও উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে হবে।’- সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
প্রয়োজন ব্র্যান্ডিং ও নতুন বাজার অনুসন্ধান
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে তৈরি পোশাকের জন্য পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে ক্রমান্বয়ে বিশ্বের তৈরি পোশাকের বাজারে আমাদের হিস্যা বাড়ছে। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে আমদানিকারকদের কাছে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে হবে ইতিবাচকভাবে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি আফ্রিকার বিভিন্ন সুপারশপে বাংলাদেশি কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে, এটা একটি ভালো লক্ষণ। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা উচিত। আমাদের সর্বোত্তম অনুশীলন এবং গুণগতমানের পাশাপাশি পণ্যের দাম প্রদর্শন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন
- ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫.২ শতাংশ
- বাংলাদেশসহ ১৩ দেশে কমেছে প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি, ক্ষতির শঙ্কায় ভারত
‘শুধু ব্র্যান্ডিং নয়, রপ্তানিকারকদেরও নতুন বাজার ও ক্রেতার সন্ধান করতে হবে। এজন্য সেক্টরের জনগণ এবং সরকারকে পুনর্গঠন ও উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে হবে’, বলেন মোয়াজ্জেম। তিনি স্থানীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উৎপাদন বাড়াতে এবং ফসল তোলার পর লোকসান কমাতে প্রযুক্তি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ দুবাইয়ের গালফুড ফেয়ার, জার্মানিতে অনুগা ফেয়ার এবং প্যারিসে এসআইএএল ফুড ফেয়ারে তাদের বিস্তৃত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জুস পণ্য প্রদর্শন করছে। বর্তমানে গ্রুপটি ১৪৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে এবং গত অর্থবছর আয় করেছে ৩৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ ব্যাপারে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন বাজার অন্বেষণ করতে আমরা পণ্য প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন এক্সপোতে ভর্তুকি মূল্যে স্টল সরবরাহ করছি। রপ্তানিসংক্রান্ত বিভিন্ন বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কাজ করছে ইপিবি।’
‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য, উন্নয়নশীল দেশে স্নাতক হওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের আলোচনা শুরু করতে হবে। অন্যদিকে, রপ্তানি প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সরকারের উচিত অন্যান্য আকারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।’-র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি
২০২৬ সালে যখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যোগ দেবে, তখন খাতটি সরকারের কাছ থেকে নগদ প্রণোদনা হারাবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা হারাবে।
রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন
‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে স্নাতক হওয়ার পর এর রপ্তানি দুটি প্রধান উপায়ে প্রভাবিত হবে। প্রথমত, এলডিসি হিসেবে যে শুল্ক সুবিধা পেত তা থাকবে না’, বলেছেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তার গবেষণা ‘ইমপ্লিকেশন্স অব এলডিসি গ্রাজুয়েশন ফর এগ্রিকালচারাল এক্সপোর্টস ফ্রম বাংলাদেশ: ইস্যুস অ্যান্ড পলিসি অপশনস’ এ কথা লিখেছেন।
অন্যদিকে, নতুন করে শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার পর, শুল্ক সুবিধাপ্রাপ্ত অনেক দেশে প্রবেশের জন্য ৭-১১ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ভারতীয় বাজারের, প্রায় ১১-২২ শতাংশ।
‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য, উন্নয়নশীল দেশে স্নাতক হওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের আলোচনা শুরু করতে হবে। অন্যদিকে, রপ্তানি প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সরকারের উচিত অন্যান্য আকারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা’, ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক যোগ করেন।
আইএইচও/এমএমএআর/জেআইএম