শেষ হচ্ছে ইএফডি অধ্যায়, একে অপরকে দুষছে জেনেক্স-এনবিআর
খুচরায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে এক বছরেও আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ায় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) বিকল্প খোঁজার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইএফডি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ১৪ আগস্ট অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহমান খানকে এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জানা গেছে, এরপর ইএফডির বিকল্প খুঁজে বের করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৫ বছর আলোচনা, পাইলট প্রকল্পের পর ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে খুচরা ব্যবসায় ইএফডি যন্ত্র বসাতে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে এনবিআর। লক্ষ্য ছিল প্রায় ২৫ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ ও সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় করা। তবে এক বছরে ইএফডি যন্ত্র বসিয়ে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক, বেইলি রোডের কিছু দোকানে ইএফডি যন্ত্র থাকলেও, দোকানিরা তা ব্যবহার করেন না। জনপ্রিয় করতে ইএফডি কুপনের বিপরীতে লটারির ব্যবস্থা করে এনবিআর। তবে সেই লটারিতেও আগ্রহ ছিল না ক্রেতাদের।
সূত্র জানায়, গত ২২ আগস্ট ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে ইএফডি যন্ত্রের বিকল্প চিন্তার নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এছাড়া ভ্যাটে উইং এ কীভাবে আরও বেশি অটোমেশন করা যায় তার রূপরেখা বের করার তাগিদ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এ মাস থেকে ইএফডি লটারি বন্ধ হচ্ছে। লটারিতে কোনো সাড়া মিলছে না। এ পর্যন্ত ১৩ টি লটারি হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরস্কারের জন্য কোনো বিজয়ী পাওয়া যায়নি। কেউ চালান কপি সঙ্গে রাখেন না, দোকানিরাও এটা ব্যবহার করেন না। এ লটারির টাকাটা দোকানিকে দিলে বরং তারা উদ্বুদ্ধ হতেন এবং ইএফডি ব্যবহার করতেন।
এর আগে ২০২১ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি ইএফডি ব্যবহার করে খুচরা কেনাকাটায় ভ্যাট পরিশোধকারী ক্রেতাকে পুরস্কার দেওয়ার লটারির প্রথম ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা ইএফডি পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতা, শর্ত লঙ্ঘন ও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জানান, গত জুনের মধ্যে ৩০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি ইনস্টল করার কথা থাকলেও মাত্র ১১ হাজার ইনস্টল করেছে।
ভ্যাট খাতে আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত করা এবং ফাঁকি রোধে ২০১৯ সালের আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঁচটি ভ্যাট কমিশনারেটে ইএফডি চালু করে এনবিআর। প্রথমে বিনামূল্যে দিলেও ব্যবসায়ীদের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যন্ত্রটি ২০ হাজার ৫৩৩ টাকায় কিনতে বলে এনবিআর। সে সময় কোনো ব্যবসায়ী যন্ত্রটি কিনতে আগ্রহ দেখাননি।
২০২২ সালের চুক্তির আওতায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাটের ৫টি কমিশনারেটের আওতাধীন এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইএফডি ও এসডিসি সরবরাহ, সংস্থাপন ও মনিটরিংয়ের কথা জেনেক্স ইনফোসিসের
গত ১৩ আগস্ট এনবিআর কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা, বিল বুঝে না পাওয়া, মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধি ও ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতাসহ নানা অভিযোগ তুলে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছে জেনেক্স।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শাহ জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, এ উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগের আশানুরূপ সুফল মিলছে না। কতিপয় খুচরা ব্যবসায়ী- এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে এ প্রকল্প কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে।
এত বলা হয়েছে, প্রকল্প নেওয়ার সময় থেকে বর্তমানে মুদ্রার মানে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ডলারের দর ছিল ৮৫ দশমিক ৮৬ টাকা। বর্তমানে এ দর গিয়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যাংকগুলো থেকে এলসি খোলায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে ডিভাইস আমদানির লক্ষ্যমাত্রাকে জটিল করে তুলেছে।
চিঠিতে জেনেক্স জানায়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে ইএফডি ডিভাইস। এসব কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। তবে এ বিলের টাকা এখনো বুঝে পায়নি তারা।
এ বিষয়ে জেনেক্সের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) জুয়েল রাশেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এছাড়া জেনেক্সের সেক্রেটারি মোস্তাক আহমেদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রকল্পের সঙ্গে চারটি টিম জড়িত। যেহেতু এটি দেশে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি, সেহেতু এর সিস্টেমে কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট সব টিমের মধ্যস্থতায় সমাধান করতে হয়। এতে অনেক সময় ও জটিলতা তৈরি হয়। সম্পূর্ণ সিস্টেমের দায়িত্ব এনবিআরের তত্ত্বাবধানে জেনেক্সে ওপর অর্পিত হলে তা অনেক বাস্তবসম্মত ও সহজ হবে।
এসএম/এমএএইচ/জেআইএম