নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অলিগার্কদের প্রশ্রয় দিয়েছে: আবু আহমেদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অলিগার্কদের তৈরি এবং তাদের প্রশ্রয় দিতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ।

বুধবার (২১ আগস্ট) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবু আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। এদের প্রশ্রয় দিয়ে তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক ভূমিকা রেখেছে তাদের পক্ষে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারেনি বিএসইসি। ফান্ড ম্যানেজার টাকা পয়সা নিয়ে ভেগে যায় কিভাবে? এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাই বড় দায়ী। মিউচুয়াল ফান্ড ও পুঁজিবাজারকে ক্ষতি করার পেছনে বড় দায় বিএসইসির।

ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকে লুট হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা লুট করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরবে না। বড় বড় কোম্পানির মালিকরা এ লুটপাট করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে পারলো ব্যাংক দখল করার সুযোগ দিতে? ব্যাংকে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি কীভাবে হয়? এটা দেখার দায়িত্ব-তো তাদের।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণেই দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির ৯০ শতাংশই অল্প কয়েকজনের দখলে চলে গেছে মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, এভাবে অর্থনীতি চালালে সাধারণ মানুষের দুর্দশা হবেই। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে থাকবেই।

মিউচুয়াল ফান্ড ও পুঁজিবাজারের ক্ষতি করার পেছনে বড় দায় রয়েছে বিএসইসির, মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড খারাপ হওয়ার কথা আমরা বারবার আলোচনা করি। এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন দায়ী।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবো সে কোম্পানি সম্পর্কে যদি নিজে না জানি, তাহলে কেন বিনিয়োগ করলাম। নলেজের কোনো বিকল্প নেই। নলেজ হচ্ছে এক ধরনের সম্পদ।

পুঁজিবাজারের আরেকটি বড় দুর্নীতির উৎস হচ্ছে তালিকাভুক্তির আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, প্লেসমেন্ট শেয়ার আরেকটি বড় দুর্নীতির জায়গা। এটা নিয়েও রেগুলেটর কাজ করতে পারেনি। ভালো আইপিও আসছে না, আনার চেষ্টাও করা হয়নি। ইনসেনটিভ না থাকলে ভালো কোম্পানি এখানে আসবে কেন? এখানে ভালো কোম্পানি আনতে হলে কোম্পানিকে ভালো কিছু সুবিধা দিতে হবে। এই সুযোগটাও এতদিনে ব্যবস্থা করতে পারেনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এ কারণে ৩৩ লাখ বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব এখন ১৩ লাখে নেমে এসেছে।

আবু আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে অর্থনীতির উন্নয়ন সবার জন্য হবে আশবাদ ব্যক্ত করে আবু আহমেদ বলেন, এই সরকার সবার সরকার। এতদিন অনেক কথাই বলতে পারিনি। এখন কথা বলা যাচ্ছে, আমাদের উচিত সরকারকে দেশ ও অর্থনীতির জন্য সহযোগিতা করা।

দেশের পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে বিশেষ ছাড় বা প্রণোদনা দিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি ও দেশের বড় কোম্পানিকে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পারসু করতে হবে। সিস্টেমেটিক ইনসেনটিভ দেওয়া লাগবে, না হলে তারা আসবে না।

বহুজাতিকের পাশাপাশি দেশেও অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে। তাদের বাজারে আনতে হলে ‘সিস্টেম ইনসেনটিভ’ দিতে হবে, না হলে তারাও আসবে না মন্তব্য করেন তিনি।

আবু আহমেদ বলেন, নতুন সরকার আসছে, আমি অনুরোধ করবো বাজেটের সময়ে তাদের জন্য কিছু রাখা। এনবিআরের কাজ হলো সরকারি কাজটি করা, দেশের অর্থনীতির জন্য কাজ করা। নিজেদের পকেট ভারী করা না।

ঋণনির্ভর অর্থনীতি কখনোই শক্তিশালী হতে পারে না। শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও সবশেষ পাকিস্তান তার উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির শক্তি হলো আমরা। ভেতর থেকেই আমাদের শক্ত হতে হবে। বিদেশি কোনো ঋণে নয়, আমাদের অর্থনীতি আমাদের ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, সুদহার ও বিনিময় হার নির্ধারণ সব কিছুই করতে হয় অন্যান্য দেশের অর্থনীতির দিকে খেয়াল রেখে। এজন্য বিশ্বের সঙ্গে অর্থনীতি চলছে কি না, তা দেখার অনুরোধ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষক বলেন, পুরো বিশ্ব থেকে অর্থনীতিকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, তাহলে ভুল হবে। অর্থনীতি যতই ছোট হোক তাকে বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলতে হবে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ডিবিএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো যা লেখা হচ্ছে তা বস্তুনিষ্ঠ কি না। বেশি লেখার দরকার নেই, যতটুকু লেখা হচ্ছে তা যেন বস্তুনিষ্ঠ হয়, এটাই মুখ্য। মানুষকে সঠিক তথ্য জানানোর দায়িত্বটি তো আপনাদেরই।

সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী বলেন, আমরা একটা সুস্থ ও দুর্নীতিমুক্ত পুঁজিবাজার চাই। যে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আর সেটা করতে হলে পুঁজিবাজারে যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম দুর্নীতি করছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা সহজ নয়। এখানে শব্দ চয়ন ও তার বিশ্লেষণ খানিকটা জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে থাকে। পাঠক ও টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করতে জানতে হয় অনেক। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে সংগঠনের সদস্যদের জন্য।

এমএএস/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।