শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪
ফাইল ছবি

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আয়-ব্যয় প্রায় সমান। এতে মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি মাসে ব্যয় বাড়ছে শিক্ষাখাতেও। আর এসবের প্রভাব পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে। চলতি বছরের মে মাসে কমেছে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকা। অন্যদিকে আমানতের পরিমাণ কমলেও ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে আলোচিত সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পরের মাস মে’তে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ কমেছে ২২ কোটি ৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত এপ্রিল মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত ছিল ১ হাজার ৫৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পরের মাস মে’তে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত কমেছে ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

গত এপ্রিল শেষে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৯৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরের মে শেষে গ্রামের শিক্ষার্থীদের হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ৫৯১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত কমেছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালের জুলাই থেকেই শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত কমে আসছে। গত বছরের জুলাই শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগস্টে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৩২ কোটি, অক্টোবরে ২ হাজার ২০২ কোটি, নভেম্বরে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ও ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ১০৯ কোটি এবং মার্চে কিছুটা বেড়ে হয় ২ হাজার ১২৮ কোটি। গত ২০২৩ সালের মে শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বেশি। এসব কারণে অনেকেই সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা সবার ক্ষেত্রেই একই পরিস্থিতি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় চান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মে মাস শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭২টি। এর আগের মাস এপ্রিলে শেষে ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ ছিল ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ২৩১টি। সে হিসাবের এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৪১ হাজার ৩৪১টি।

এসব ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ১৯ লাখ ১২ হাজার ২৩৮ টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে। যার মধ্যে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ২২ লাখ ১ হাজার ৪৭৩টি এবং মেয়েদের অ্যাকাউন্ট ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯টি।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এ কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা। একই সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। এখন পর্যন্ত দেশের ৫৯ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের এ অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। তাদের হিসাবের সুবিধার মধ্যে রয়েছে-সব ধরনের ফিস ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যুনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

ইএআর/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।