সরকারের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন ব্যবসায়ীদের
যেকোনো সংকটে ব্যবসায়ীরা সবসময় সরকারের সঙ্গে ছিলেন এবং আগামীতেও থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।
সোমবার (২২ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা এ আশ্বাস দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ সহকারে ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরু থেকেই সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন চলতে থাকে। তবে ১৮ জুলাই থেকে দুর্বৃত্তরা দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা। চলমান ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকে সংগঠিত রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যেন দেশে আর কখনো ঘটাতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধ ও প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন তারা।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির মনজুর, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
- আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যেতে চাই: আহসান খান চৌধুরী
- ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ৫ দিনে ই-কমার্সে ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা
এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশকে অকার্যকর করতে চায়। ব্যবসায়ীদের অবস্থান তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যারা ক্রমবর্ধমান ও অগ্রবর্তীমূলক অর্থনীতিতে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, দেশের ব্যবসায়ী সমাজ তাদের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই থাকতে পারে না।
সরকারের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের সবসময় ভালোবেসেছেন। তাই অতীতের মতো বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও আমরা আপনার পাশে রয়েছি। জীবন দিয়ে হলেও আপনার পাশে থাকবো।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ছিল। আপনি ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের অর্থনীতিকে ৪০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন। আপনি দেশকে ভালোবাসেন বলেই দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছেন। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এ সময় অর্থনীতি ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের উন্নয়ন একাত্তরের প্রেতাত্মাদের পছন্দ নয়, মেট্রোরেল তাদের পছন্দ নয়, টানেল তাদের পছন্দ নয়, বিটিভি তাদের পছন্দ নয়। তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বিজেএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, ছাত্র আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ চক্র সারাদেশের সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের সম্পদ ধ্বংস করা ও বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করা।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কলকারখানা ও ইন্টারনেট চালু রাখার দাবি জানান।
বৈঠকে এপেক্স গ্রুপের এমডি নাসিম মঞ্জুর বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আশা করছি সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। বলা হয়েছে, যারা সত্যিকার ছাত্র তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই এটাকে স্বাগত জানাই। আমরা দেখেছি, প্রথমে এটা ছিল যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ ছাত্রদের আন্দোলন। সেটা পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় পরিণত হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ এটা দেখতে চাই না। মেট্রোরেল যখন ধ্বংস করে, তখন আমাদের বুকে লাগে। এটা হতে পারে না। যারা এটা করেছে তাদের আপনারা আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।
এসএম/ইএ/এএসএম