বাপার ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা
‘বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস’ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)’র ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ১৩ জুলাই ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশ থেকে আগত বাপার প্রায় দু’শতাধিক সদস্য এতে উপস্থিত ছিলেন।
বাপার সভাপতি মো. আবুল হাসেম ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাপার সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বাপার ২২তম এজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর কোভিড মহামারি এবং বাপার প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আর কোনো এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এজিএম সমূহ একই সাথে সম্পন্ন করা হয়। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের কোম্পানি সংক্রান্ত মামলা নং-৮৩৪/২০২৩-এর আদেশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর বাপার এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ায় সভাটি সদস্যদের অত্যন্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এ পর্যায়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সীসহ অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যুজনিত শোক প্রস্তাব করা হয় এবং মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
সভায় গত ২২তম এজিএম এর কার্যবিবরণী অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক। এরপর সাধারণ সম্পাদক ২০১৯-২০২৩ সাল পাঁচ বছরের সব কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। অনুক্রমিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর এবং পূর্বের সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনসমূহ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন বাপার কোষাধ্যক্ষ মিনহাজ আহমেদ।
এজিএম-এ উপস্থাপিত সব প্রতিবেদন বাপার সদস্যদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা, সংশোধনীসহ প্রস্তাব এবং অনুমোদনের মাধ্যমে গৃহীত হয়। সভায় চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপিত হয় এবং হিসাব নিরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যায়ে সভাপতির সঞ্চালনায় এজিএম-এ উপস্থিত সব সদস্যের বক্তব্য এবং উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এজিএম-এ উপস্থিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ জুন এফই ১২ সার্কুলারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানির বিপরীতে সরকারের নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
সদস্যরা বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামালের প্রায় শতভাগ এদেশে উৎপাদিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ইহা একটি দেশীয় অপরিহার্য উদীয়মান খাত। সদস্যদের প্রস্তাব মতে, এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সঙ্গে এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সোর্স ট্যাক ১ শতাংশ হতে কমানোর দাবি করা হয়।
উপস্থিত সদস্যরা তৈরিকৃত পোশাকখাত এবং ফ্রোজেন ফিস-এর মতো বিদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে রপ্তানিতে অবদান রাখতে পারে সেজন্য চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন (Contract Manufacturing) করে এর বিপরীতে এসএমই প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি নগদ সহায়তার প্রস্তাব করেন। এছাড়া, দেশে উৎপাদিত সুগন্ধি চাল বিদেশে রপ্তানি পুনরায় চালু করার দাবি জানান।
সদস্যরা বলেন, দেশের সুগন্ধি চালের বাজার ছোট, ফলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে সুগন্ধি চাল রপ্তানি অব্যাহত রাখলে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বাপার সদস্যরা অ্যাসোসিয়েশনের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য ঢাকা অথবা আশপাশে জমি ক্রয় তথা গবেষণা ল্যাব, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, লাইব্রেরি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
এজিএম-এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাপার সহ-সভাপতি আবদুল মাজেদ এবং উপস্থিত বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিক, অংশীদার এবং কোম্পানির শেয়ার হোল্ডাররা।
অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, আগামীতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সব সদস্যর একক এবং অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সম্মিলিত ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাপার সভাপতির সমাপনী বক্তব্য এবং মধ্যাহ্ন ভোজে আপ্যায়নের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটে।
এমআরএম/জেআইএম