আহসান এইচ মনসুর

থালাবা‌টি বেচে কোরমা-পোলাও খেলে ব্যাংক টিকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪
ইআরএফ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর

আইএমএফের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘এখন ঋণ আদায় না ক‌রেই ঋণের সুদকে আয় দে‌খি‌য়ে মুনাফা দেখা‌চ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থে‌কে লভ‌্যাংশও দি‌চ্ছে। সরকার‌ও ট‌্যাক্স পাচ্ছে। বাস্তবে ব্যাংকের কো‌নো আয়ই হয়‌নি। আমান‌তের অর্থ লু‌টে খাওয়া হ‌চ্ছে। এর মানে ঘ‌রের থালাবা‌টি বেচে কোরমা-পোলাও খা‌ওয়া হচ্ছে।’

এভা‌বে আর কত‌দিন ব‌্যাংক চলবে- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এতে আমানত শেষ হ‌য়ে যাবে, কিন্তু গ্রাহ‌কের অর্থ আর ফেরত দি‌তে পার‌বে না। ব‌্যাংকে মন্দঋণ, অনিয়ম, দুর্নী‌তি, অর্থপাচার লু‌কি‌য়ে রেখে এ খাতের সমস‌্যা সমাধান সম্ভব হবে না।’

শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানী‌র পল্ট‌নে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আর্থিক খা‌তের ক্লিনিং (পরিষ্কার) ক‌র‌তে হ‌বে। ব‌্যাংকখা‌তের সমস‌্যাগু‌লো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখ‌া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘ‌রের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দি‌য়ে কা‌র্পেটের নি‌চে রে‌খে দি‌চ্ছে। এতে আস‌লে দুর্গন্ধ দূর হ‌য় না, কোনো না কোনো একদিন আবারও দুর্গন্ধ ছড়া‌বে। অনিয়মের তথ্য বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসব তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণে ব্যাংকখাতের অনিয়মের দুর্গন্ধ পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।’

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, ‘ব‌্যাংকে মন্দ ঋণ, অনিয়ম, দুর্নী‌তি, অর্থপাচার লু‌কি‌য়ে রেখে এ খাতের সমস‌্যা সমাধান সম্ভব হবে না। এজন‌্য আর্থিক খা‌ত পরিষ্কারের (ক্লি‌নিং) উদ্যোগ নি‌তে হ‌বে। এ উদ্যোগ সরকার‌কে নি‌তে হ‌বে, যেখা‌নে বাংলা‌দেশ ব‌্যাংকেও থাকবে।’

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘শুধু রপ্তানির তথ্য লুকানো হয় কি? সবচেয়ে বেশি তথ‌্য লুকা‌নো হ‌চ্ছে আর্থিক খা‌তে। অথচ আর্থিক খাতেই স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি। বাংলা‌দেশ ব‌্যাংকের তথ্যে খেলাপিঋণ দেখানো হচ্ছে এখন ১১ শতাংশ। বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর্থিকখাত বেশিদিন চলতে পারে না। তদারকির অভাবে আমাদের মুদ্রাবাজার হাতছাড়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতিও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকখাত ঘুণে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম বেড়েছে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ব্যাংক নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। তাহলে আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা দেবে কীভাবে?’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। ইআরএফ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ব্যাংকিংখাতের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমকালের বিশেষ প্রতিবেদক ওবায়দুল্লাহ রনি এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব।

ব্যাংকখাত নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, সরকার পদ্মা সেতুসহ বি‌ভিন্ন অ‌বকাঠ‌মো তৈ‌রি ক‌রে যে প্রশংসা অর্জন ক‌রে‌ছে তা আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে উচ্চ মূল‌্যস্ফী‌তি, খেলা‌পি ঋণ ও আর্থিক কে‌লেঙ্কা‌রিতে। আর্থিক খা‌তের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসে‌বে এ দায় বাংলাদেশ ব‌্যাং‌কের ওপর বর্তায়। এসব বিষ‌য়ে এখনই উদ্যোগ না নিলে বড় ধর‌নের সমস‌্যা সৃ‌ষ্টি হ‌বে দেশের ব‌্যাংকখা‌তে।

ইএআর/কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।