বাংলাদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে আমিরাতের শ্রমবাজার

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৯ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৪
আমিরাতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশ/জাগো নিউজ গ্রাফিক্স

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের মতো এ শ্রমবাজারটিও বাংলাদেশিদের কাছে হয়ে উঠছে আকর্ষণীয়। দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে উপসাগরীয় এ দেশটি থেকে। তবে সম্ভাবনার এ শ্রমবাজারে নিয়ম না মেনে কর্মী পাঠালে বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আল হামুদীর সঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর একটি বৈঠক হয়। এতে নতুন করে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি চাকরি বা কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া হবে বলে এক সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আশ্বস্ত করেন হামুদী।

মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা যাবে। আমি যতদূর জানি এবার লোক নেওয়ার জন্য আনাস ওভারসিজ এজেন্সি কিছু কাজ পেয়েছে। বর্তমানে আরব আমিরাতে যাওয়ার সরকারি খরচ এক লাখ ৭ হাজার টাকা।-উপ-সচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার

চলতি বছর পাঠানো হবে ১৩শ কর্মী

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দুই হাজার মোটরসাইকেল আরোহী ও ট্যাক্সিচালক নেবে। এরই মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত হামুদীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চলতি বছর পাঠানো হবে ১৩শ কর্মী। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে আমিরাতের শ্রমবাজার

এই শ্রমবাজারটিতে নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এটি নতুন একটি সুযোগ। এখানে শিক্ষিত মানুষদের প্রায়োরিটি বেশি থাকবে। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশটি থেকে রেমিট্যান্সও আসবে বেশি।

আমিরাতে যাওয়ার সরকারি খরচ ১ লাখ ৭ হাজার

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগের উপ-সচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন এ কোম্পানি অনেক ভালো। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ থেকে যারা এই ভিসায় যাবে তারা উপকৃত হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা যাবে। আমি যতদূর জানি এবার লোক নেওয়ার জন্য আনাস ওভারসিজ এজেন্সি কিছু কাজ পেয়েছে। বর্তমানে আরব আমিরাতে যাওয়ার সরকারি খরচ এক লাখ ৭ হাজার টাকা।’

বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী এখন আমিরাতে

আমিরাতে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে পাড়ি দিয়েছেন ২৬ হাজার ১৯২ জন বাংলাদেশি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশিদের নেওয়া বন্ধ করে দেয় আরব আমিরাত। ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ এর আয়োজক হওয়ার দৌড়ে ২০১২ সালের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ দুবাইয়ের পক্ষে ভোট না দিয়ে মস্কোর (রাশিয়া) পক্ষে ভোট দেওয়ায় ওই পদক্ষেপ নেয় আরব আমিরাত। এরপর দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে ২০২০ সালে পুনরায় দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালে ১ হাজার ৮২ জন শ্রমিক দেশটিতে যান। এরপর ২০২১ সালে পাড়ি জমান ২৯ হাজার দুইশ দুজন শ্রমিক। ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি আরব আমিরাতে কাজের জন্য যান।

বিএমইটির ওয়েবসাইটে দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২১ লাখ ৫৮ হাজার কর্মী আরব আমিরাতে গেছেন, যা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম স্থানে রয়েছে সৌদি আরব, দেশটিতে ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৫ জন কর্মী।

বাজার ঠিক রাখতে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ম মানা উচিত। একই সঙ্গে তাদের বেতন যেন স্থানীয় জীবনযাপন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

আমাদের এজেন্সিগুলো নিয়মের মধ্যে লোক পাঠাচ্ছে না। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত কর্মী যেন না পাঠানো হয়, তাহলে কিন্তু মিস ম্যানেজমেন্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মের মধ্যে পাঠানোর পরামর্শ থাকবে।- রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী

বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী দুবাই যাওয়ার পর কর্মী নেওয়ার ভালো চাহিদা এসেছে। সেটা ফুলফিল করার সক্ষমতাও আমাদের আছে। ওখানে গিয়ে যদি শ্রমিকরা ভালো থাকে, চুক্তি অনুযায়ী কাজ দেয়, তাদের বেতন ঠিকভাবে দিলে এটা ভালো শ্রমবাজার হবে। তবে বর্তমানে দুবাইতে জীবনযাপনের খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। সেখানে আগের বেতনে গেলে ঠিক হবে না। নতুন করে কর্মীদের বেতন বাড়াতে হবে।’

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুবাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। তবে এ বাজারটিতে আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এত বেশি লোক পাঠাচ্ছে, আমার শঙ্কা হচ্ছে এই শ্রমবাজারটি যেন নষ্ট না হয়ে যায়।’

বাংলাদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে আমিরাতের শ্রমবাজার

তিনি বলেন, আমাদের এজেন্সিগুলো নিয়মের মধ্যে লোক পাঠাচ্ছে না। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত কর্মী যেন না পাঠানো হয়, তাহলে কিন্তু মিস ম্যানেজমেন্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মের মধ্যে পাঠানোর পরামর্শ থাকবে।’

রেমিট্যান্সে সৌদিকে টপকে শীর্ষে আরব আমিরাত

বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমবাজার হলেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের শীর্ষে উঠে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছর থেকে ১৫৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা।

দুই বছর ধরে দেশের রিজার্ভ সংকটের মধ্যে এই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

আরএএস/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।