প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে বক্তারা

নীতি সহায়তা পেলে সোনা খাত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আনবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২৪
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়েছে

নীতি সহায়তা পেলে তৈরি পোশাক খাতের মতো সোনা খাত একদিন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা) আনবে বলে মন্তব্য করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, সোনা খাত যদি নীতি সহায়তা পায় তাহলে ব্যবসায়িকভাবে তারা আরও অনেক এগিয়ে যাবেন। নীতি সহায়তা পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি, সেটা পূরণে এ খাত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশ (আইজেএমইবি) ২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমদ। এছাড়া কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রান্তি নাগভেকার, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার রায়, সহ-সভাপতি সুমিত ঘোষ অপু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল।

এর আগে দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশ (আইজেএমইবি) ২০২৪ এর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালেরকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়বসহ বাজুসের নেতারা।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আজ দেশে প্রথম তিনদিনের আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী শুরু হলো। এটা একটা আন্তর্জাতিক প্রদশর্নী, বাজুসের ৪০ হাজার সদস্যের সঙ্গে দেশের আরও ১০ লাখ মানুষ জড়িত। এই শিল্প রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে অবদান রাখছে। রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাক খাতের মতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আনবে বলে সে প্রত্যাশা আমরা করি। এ ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, এই শিল্প যদি নীতি সহায়তা পায় তাহলে ব্যবসায়িকভাবে এ খাতে জড়িতরা আরও অনেক এগিয়ে যাবে। তবে শিল্পকারখানা ও ট্রেড এই দুই বিষয়কে আলাদা করতে হবে। যারা শিল্পকারখানা করে তাদের জন্য নীতি সহায়তা এক রকম এবং যারা ট্রেড করে তাদের জন্য নীতি সহায়তা আরেক রকম হবে। তাহলে অনেকেই শিল্প করার জন্য এগিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে, সেটা পূরণ হবে।

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, আমরা জানি এই শিল্পের সঙ্গে ইনফরমাল খাতের কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেখান থেকে সরে সে যেন ফরমাল খাতে ব্যবসা করতে পারে, সে বিষয়ে অনুরোধ করবো। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে সুন্দরভাবে আমরা ব্যবসা করতে চাই। তবে এ জন্য ভালো পলিসি হচ্ছে নীতি সহায়তা আমাদের দরকার। যার মাধ্যমে আপনারা ব্যবসা করবেন। যে কোনো ধরনের সমস্যায় এফবিসিসিআই আপনাদের পাশে আছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সোনা বিক্রিতে আমাদের পাশের দেশগুলোতে ভ্যাট ৫ শতাংশের নিচে। এ জন্য আমি এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করবো যাতে সোনা বিক্রিতে ৩ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে দেয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমদ বলেন, এই শিল্পের বিশাল সম্ভবনা রয়েছে। তবে গোল্ড রিফাইনারির জন্য সোনার প্রয়োজন, কিন্তু দেশে সোনা নেই, সেটা কোথায় পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। তখন বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন তিনি বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সোনা আমরা পাবো। আর তখন দেশে হাজার হাজার সোনার কারখানা তৈরি হবে। যা হবে রপ্তানিযোগ্য। আজ যে সোনা সেটা আমদানি করে জুয়েলারি তৈরি করতে হয়। আর মেড ইন বাংলাদেশ হতে হলে ২৫ শতাংশ র-ম্যাটেরিয়াল হতে হবে বাংলাদেশে। তখন বাংলাদেশের সোনা রপ্তানিযোগ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি অপেক্ষায় আছি সরকার কবে এ খাতে প্রণোদনা দেবে। আমি দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের যে প্রতিভাশালী কারিগর রয়েছে তারা যদি একটু প্রশিক্ষণ পায় তাহলে যে কোনো খাত থেকে সোনা খাত অনেক বেশি লাভজনক হবে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় নতুন নতুন পণ্য আনতে বলছেন। সোনা হলো সেই পণ্য যা সব খাতকে ছাড়িয়ে যাবার সক্ষমতা রাখতে পারে। বাজুসের নেতৃত্ব বাংলাদেশকে একটা সোনার নতুন সোর্স হিসেবে পরিচিত করতে পারবো।

বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি ডা. দীলিপ কুমার রায় বলেন, প্রদশর্নীর উদ্দেশ্য হলো দেশের জুয়েলারি শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী সোনা নীতিমালা করেছেন। আর সেই নীতিমালা বাস্তবায়নে বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর দেশের ৪০ হাজার ব্যবসায়ীকে এক ছাতার নিচে এনেছেন। কারণ এখন থেকে আমরা আর বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকার এনে বিক্রি করবো না। আমাদের দেশে স্বর্ণালংকার তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবো এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের এই প্রদশর্নী। আমাদের একটি বদনাম আছে যে বিদেশ থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণালংকারের দাম ভরিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি। সেটা যাতে না থাকে সে জন্য এই প্রদশর্নী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক ভরি সোনার গয়না হাতে তৈরি করলে ৮ থেকে ৯ শতাংশ নষ্ট হয়। আর মেশিনে তৈরি করলে ২ থেকে ৩ শতাংশ নষ্ট হবে। এই যে ৭ হাজার টাকার পার্থক্য সেটা আর থাকবে না। এ জন্য আমদের যে ছোট-বড় কারখানা রয়েছে তারা সবাই আমাদের অলংকার দেশেই তৈরি করবে এবং চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে। অনেকেই বলেছেন মেশিনে অলংকার তৈরি হলে ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, কারিগর বেকার হবে। সেটা কখনো হবে না, কারণ সোনা শিল্পীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হচ্ছে। চারুকলার ছাত্রদের দিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে। সেই ডিজাইনে অলংকার তৈরি করে আমাদের সোনা শিল্পীরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

এমএএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।