‘সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না বের করা উচিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২৪

সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না তা সরকারের বের করা উচিত। শনিবার (২৯ জুন) বিএফডিসিতে কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভূমিকাই মূখ্য শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আলোচকরা এ কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

এসময় এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক সর্বমোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ। তবে রপ্তানির আবার ৬৪ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। ফলে এ খাতের ভ্যালু এডিশন কম। কিন্তু চামড়া শিল্পে শতভাগ ভ্যালু এড হতে পারে। ফলে এ শিল্প অনেক বড় ভূমিকা রাখে দেশের অর্থনীতিতে।

‘সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না বের করা উচিত’

তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে এ খাত ভুগছে। সেগুলো সমাধান প্রয়োজন। সরকার সাভারের মতো নাটোর ও চট্টগ্রামে সিইটিপি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এ বছর চট্টগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে যেভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে সেভাবে কোরবানির পর যথাযথভাবে লবণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলায় সংরক্ষণ করার জন্য বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের চামড়া শিল্পের সোনালী দিন ফিরে আসবে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কোরবানিতে বিপুল সংখ্যক পশু জবাই হলেও চামড়ার ন্যায্য দাম পাচ্ছে না বিক্রেতারা। কাঁচা চামড়ার বাজারে সর্বপ্রথম ধস নামে ২০১৯ ও ২০২০ সালে। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত কাঁচা চামড়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

তিনি বলেন, সেই সময়ে গরুর কাঁচা চামড়ার সরকারি দর ছিল ৪৫-৫০ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের থেকে পূর্বের পাওনা না পাওয়ার কারণে চামড়া ক্রয় করেনি বলে জানা গেছে। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে চামড়ার বাজারের সবচেয়ে কম দাম নির্ধারণ করে সরকার। সে সময়ে গরুর চামড়ার দাম ধরা হয় ৩৫-৪০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যে গরুর চামড়া বিক্রি করা যায়নি। অথচ মাত্র ১০ বছর আগেও যখন এত মূল্যস্ফীতি মূদ্রাস্ফীতি ছিল না, তখনও গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। বর্তমানে গরুর দাম অনেক বাড়লেও চামড়ার দাম উল্টো কয়েকগুণ কমেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে চামড়ার ক্রেতা খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১২-২০১৩ সালে ২০-২৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন কয়েক লাখ টাকার গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছে না।

‘সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না বের করা উচিত’

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে চামড়ার বাজারে এই করুণ পরিস্থিতির জন্য দায় কার। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত চামড়া এলডব্লিউজি সনদপত্র না থাকায় বিশ্ব বাজারে সঠিক দামে তারা বিক্রি করতে পারছে না। ফলে কাঁচা চামড়ার চাহিদা কমে যাচ্ছে।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ থেকে জানা যায় ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কম দামে কোরবানির চামড়া কিনতে যদি কোনো সিন্ডিকেট হয়ে থাকে তাহলে মনে রাখতে হবে তারা গরীব ও অসহায় মানুষের ওপর অবিচার করছে। কাঁচা চামড়ার বিক্রিত অর্থ মসজিদ মাদরাসাসহ এতিম, হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হক। অথচ এ গরীবদের ঠকিয়ে সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের বের করা উচিত।

কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভূমিকাই মূখ্য শীর্ষক এ ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

এনএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।