ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত
দীর্ঘদিন পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন
পতন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বুধবারও শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এর মাধ্যমে শেষ আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললো। আর ২৫ কার্যদিবস বা এক মাসের বেশি সময় পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির অনুমোদন মেলায় শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, টানা দরপতনে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় চলে গেছে। এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এখন শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোই হবে স্বাভাবিক ঘটনা।
অর্থনৈতিকে সংকট মোকাবিলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশে। নানা দেন-দরবারের পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএফ। শর্তসাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেওয়া হবে।
আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ফেব্রয়ারিতে। এরপর ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। তবে তৃতীয় কিস্তির ঋণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। এ নিয়ে ছাড়ায় নানা গুঞ্জন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়াসহ আরও কয়েকটি কারণে দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হয়।
এমন পরিস্থিতিতেই আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার সব শঙ্কা কেটে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় তৃতীয় কিস্তির প্রায় ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ ডলার ছাড় হয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে।
আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের খবরে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। সেই সঙ্গে ১০ কার্যদিবস পর ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। বুধবার এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এক মাসের বেশি সময় পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের শেষদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৩০২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯০৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্লাটিলেট যেভবে কাজ করে শেয়ারবাজারের জন্য আইএমএফের ঋণ অনুমোদ অনেকটাই ‘প্লাটিলেট’র মতো কাজ করেছে। নানা ইস্যুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এখন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক। তবে তার জন্য একটি সুসংবাদ বা অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদের প্রয়োজন ছিল। আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অনুমোদন সেই কাজটি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি বাজার এখন ইতিবাচক ধারায় থাকবে। অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না ঘটলে বাজারে আবার টানা দরপতন হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে বাজারের এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। অতিরিক্ত লোভ যেমন করা যাবে না, তেমনি অকারণে প্যানিকড হওয়া যাবে না। যারা বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারবেন, তারাই বাজার থেকে ভালো মুনাফা করতে পারবেন।
এদিকে সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬২ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্যাপটিভ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাভেলো আইসক্রিম, ওরিয়ন ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক এবং রবি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এমএএস/ইএ/জেআইএম