কেন কমছে পোশাক রপ্তানি?
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে চার হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের চার হাজার ২৫৩ কোটি ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। তবে তা সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। সরকার ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল চার হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার।
নিট পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ কিন্তু ওভেন পণ্যের আয় কমেছে ১ দশমিক ০৯ শতাংশ। নিট পণ্য থেকে আয় হয়েছে দুই হাজার ৪৭০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং ওভেন থেকে এক হাজার ৯১৪ কোটি ১১ লাখ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও মে মাসের রপ্তানি আয় কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। এ সময় পোশাক পণ্যের রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার যা আগের বছরের মে মাসে ছিল ৪০৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
- আরও খবর
মে মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ১৬ শতাংশ
দেশে সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২১৪
পোশাক-কৃষিসহ ৪৩ খাতে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমালো সরকার
মে মাসে নিট পণ্যের আয় কমেছে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মে মাসে আয় হয়েছিল ১৮৩ কোটি ডলার যা গত বছরে ছিল ২৩১ কোটি ডলার। ওভেন পণ্যের আয় ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ৫ লাখ ডলার। গত বছরে আয় হয়েছিল ১৭৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
পোশাক শিল্পের আয় কমার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অর্থনীতিবিদরা। এদের মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পোশাকের ইউনিটের দাম কমে যাওয়া। অন্যদিকে বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কার্যাদেশের কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়, যার ফলে মে মাসে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে কটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে পোশাক পণ্যের দাম ও চাহিদা দুটোই কমেছে। আমাদের পণ্যের আমদানিকারকরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক পণ্যের চাহিদাও কমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পরপর দুই মাস নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এছাড়া গ্যাসের সরবরাহ সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদন কমেছে। ফলে রপ্তানি আয়ে এর প্রভাব রয়েছে।’
রপ্তানিতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করে মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘রপ্তানিকারকরা কনটেইনার সংকটের কারণে যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে পারছেন না। বহুসংখ্যক গাড়ি রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন কনটেইনার পাওয়ার জন্য।’
- আরও খবর
পোশাক শিল্পের জন্য বাজেট হতাশাব্যঞ্জক
প্রায় সব পোশাক কারখানাই দিয়েছে উৎসব ভাতা: বিজিএমইএ
বিজিএমইএ সভাপতি/ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় প্রথম
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় কমা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এসএম মান্নান কচিরে সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রপ্তানিমুখী পোশাক পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কারণ শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য। ফলে আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মূল্য সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছি না। এমনই সংকটময় মুহূর্তে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়েছেন। ফলে রপ্তানিতে ছন্দপতন হয়েছে।’
রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সামনের মাসগুলোতেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
আগামী অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পোশাক রপ্তানিকারকরা প্রস্তাবিত বাজেটে বর্ধিত কর হারের প্রত্যাহার চান। সেই সঙ্গে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার দাবি জানান এবং তা আগামী ৫ বছরের জন্য বহাল রাখার দাবি জানান কচি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বর্তমানে কিছুটা অস্থির, যার প্রভাব রয়েছে আমাদের অর্থনীতির ওপরে, বিশেষ করে রপ্তানি খাতে। বেশ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক পণ্যের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। ফলে তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
তবে অবস্থার কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই রপ্তানি ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন, এ অর্থনীতিবিদ।
- আরও খবর
পোশাকের নতুন বাজারে ১৪ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১০ গুণ
পোশাক খাতে বেড়েছে নতুন বিনিয়োগ, রপ্তানি কমেছে প্রধান বাজারে
ছোট হচ্ছে পোশাক পণ্যের বড় বাজার, বিকল্পের খোঁজে রপ্তানিকারকরা
এদিকে, মে মাসে দেশে সামগ্রিক রপ্তানি আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। পণ্য রপ্তানি থেকে মে মাসে আয় হয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম। গত বছরের মে মাসে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মাসের রপ্তানি আয় বেড়েছে দুই শতাংশ। এ সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
আইএইচও/এমএমএআর/জেআইএম