পোশাক শিল্পের জন্য বাজেট হতাশাব্যঞ্জক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ০৮ জুন ২০২৪
ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ নেতারা। ছবি : জাগো নিউজ

পোশাক শিল্পের জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট হতাশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছে তৈরি পোশাক, নিট ও বস্ত্র মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। শনিবার (৮ জুন) ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর ০ .৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিলো এবং আছে। পাশাপাশি আরও প্রত্যাশা ছিলো - বাজেটে ইনসেনটিভের ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, পোশাক শিল্পের ঝুটের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ইত্যাদির ঘোষণা আসবে, যা বাজেটে উঠে আসেনি। এটা আমাদের জন্য হতাশাব্যাঞ্জক।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কঠিন বাস্তবতায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা করা হয়েছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক।

সংবাদ সম্মেলনে এস এম মান্নান কচি বলেন, মূল্যস্ফীতিকে একাধিকবার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক প্রস্তাবনাগুলোকে আমরা সাধুবাদ জানাই, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো। সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ১৭টি বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। শিল্প কারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪.৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। পূর্বে এটি এক শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। আমরা পুনরায় এটি এক শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পলিয়েস্টার ফাইবার (পিএসএফ) ও পেট চিপস (টেক্সটাইল গ্রেড)উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ১০ ও ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে। এগুলো নিঃসন্দেহে শিল্পের জন্য সহায়ক। তবে বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে যেগুলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করছি। যেমন : স্টিল বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব; অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ থেকে এক শতাংশ নির্ধারণ; জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতির ওপর ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব; নতুন বন্ড লাইসেন্স ফি ৫০ হাজার টাকার স্থলে এক লাখ টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আপনারা জানেন যে কোভিড মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। একই সঙ্গে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিল্প একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্প যখন এরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো সিংহভাগ রপ্তানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।

আইএইচও/এমএমএআর/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।