মন্দা শেয়ারবাজারেই বসলো ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৬ পিএম, ০৬ জুন ২০২৪

ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের গুঞ্জনে প্রায় এক মাস ধরে পতনের মধ্যে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের মন্দা পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার দাবি জানিয়েছিলেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে তাতে কর্ণপাত না করে বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধনী মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীর সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়ে এই কর আরোপের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছেন। আর ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে।

অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী ৬০ লাখ টাকা ক্যাপিটাল গেইন করলে, সেই ক্যাপিটাল গেইনের ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি ১০ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। ক্যাপিটাল গেইন হলো শেয়ারবাজারে শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেনের মাধ্যমে করা মুনাফা।

তবে কোনো বিনিয়োগকারী যদি কোনো শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেন, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।

এছাড়া বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর বাইরে কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যে মুনাফা করবে, সেই মুনাফার ওপর কর দিতে হবে।

ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার ভিত্তিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে এই কর আরোপ না করার দাবি জানায়। এছাড়া বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার দাবি জানানো হয়।

এদিকে বর্তমানে কোম্পানি করদাতার জন্য খাতভিত্তিক অনেকগুলো করহার কার্যকর রয়েছে। আয়কর আইনে সংজ্ঞায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার শর্তসাপেক্ষে ২৭.৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতিকে অধিকতর আনুষ্ঠানিক করা এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির মতোই শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার শর্তসাপেক্ষে ২২.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

করপোরেট করহার কমানোর শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে, সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত কর্পোরেট কর হার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বহাল রাখারও প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

কোন প্রতিষ্ঠানের করহার কত

> পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে তাদের করহার সাড়ে ২২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পরিপালন করলে আড়াই শতাংশ রেয়াত পাওয়া যাবে, এতে করহার হবে ২০ শতাংশ।

> পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের করহার ২৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পরিপালন করলে আড়াই শতাংশ রেয়াত পাওয়া যাবে, এতে করহার হবে সাড়ে ২২ শতাংশ।

> আয়কর আইন, ২০২৩ এ সংজ্ঞায়িত কোম্পানির মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, তাদের করহার সাড়ে ২৭ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পরিপালন করলে আড়াই শতাংশ রেয়াত পাওয়া যাবে, এতে করহার হবে ২৫ শতাংশ।

> এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পরিপালন করলে আড়াই শতাংশ রেয়াত পাওয়া যাবে, এতে করহার হবে ২০ শতাংশ।

> পাবলিকলি ট্রেডেড-ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

> পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এরূপ ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

> মার্চেন্ট ব্যাংকের কারহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

> সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির করহার ৪৫ শতাংশ এবং আড়াই শতাংশ সারচার্জ। এক্ষেত্রেও কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

> পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি যদি তার পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার, যার মধ্যে প্লেসমেন্টে শেয়ার ৫ শতাংশের অধিক থাকতে পারবে না, এ ধরনের কোম্পানির করহার ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

> পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফোন কোম্পানির করহার ৪৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও কোনো রেয়াত প্রযোজ্য নয়।

এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।