যেভাবে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করতে চায় এনবিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০৮ পিএম, ০৬ জুন ২০২৪
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) উপস্থাপন করা এ প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত এ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর খাতে ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বড় অংশ আসবে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে।
আসন্ন অর্থবছরে ২০ খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের সব স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আসবে ৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ভ্যাট। সিগারেটের তিন স্তরে সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে মোবাইল ফোন ও সেবার বিপরীতেও। মোবাইল ফোনের টকটাইম ও সিম বিক্রি থেকে বাড়তি ভ্যাট আসবে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশীয় এসি ও ফ্রিজের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে এ খাত থেকে আসবে ৪০০ কোটি টাকার ভ্যাট।
আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয়, কার্বনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এসব থেকে আসবে বাড়তি ২০০ কোটি টাকা। বাড়ছে আইসক্রিমের শুল্ক, যা থেকে ৫০ কোটি টাকা আসবে। এছাড়া নির্মাণসামগ্রী ইটের ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাত থেকে আসবে ৫০ কোটি টাকা। ট্যুর অপারেটর, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক, সিকিউরিটি সার্ভিস, লটারির টিকিট বিক্রয়কারী সেবাসহ এ ধরনের ১১ আইটেমে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়েছে। এসব থেকে আসবে বাড়তি ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকে জমা আবগারি শুল্কের বিভিন্ন স্তরে বাড়ানো হয়েছে কর। সেখান থেকে আসবে ২ হাজার কোটি টাকা। এভাবে বাড়তি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের ছক বানিয়েছে এনবিআর। এছাড়া মেট্রোরেল থেকেও বড় অংকের ভ্যাট সংগ্রহের কথা ভাবা হচ্ছে।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পূরণ হবে বলে মনে করছে ভ্যাট বিভাগ। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে মূসক থেকে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে এক লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।
যদিও চলতি অর্থবছরের শেষ সময়ে সংশোধন করা হয় লক্ষ্যমাত্রা। রাজস্ব আদায়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি এবং আয়কর থেকে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুল্কে আহরণ হয়েছে ৮২ হাজার ৫২২ কোট ২৮ লাখ টাকা। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৮১ লাখ এবং আয়করে আহরণ হয়েছে ৯৩ হাজার ১৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এসএম/কেএসআর/জেআইএম