বাজেট দিতে লাল ব্রিফকেস কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ০৬ জুন ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল ঐতিহ্যবাহী লাল ব্রিফকেস। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের দিন সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি থাকে অর্থমন্ত্রীর দিকে। কেননা সারা বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ধারণ হয় এই বাজেটে। বাজেট ঘোষণার দিন সংসদে গাড়ি থেকে নামার পরই সবার দৃষ্টি থাকে অর্থমন্ত্রীর হাতের দিকে।

তবে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে গাড়ি থেকে নামার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর হাতে ব্রিফকেস ছিল না। তার হাতে ছিল কালো প্লাস্টিকের একটি ফাইল। অর্থমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল ঐতিহ্যবাহী লাল ব্রিফকেস। এটি তার প্রথম বাজেট।

প্রতিবার বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রীদের হাতে ব্রিফকেস থাকে কেন, আর ব্রিফকেস থাকলেও সেটি লাল রঙের হয় কেন- এ নিয়ে রয়েছে সবার কৌতূহল।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় আসে ব্রিফকেস। ঠোঁটে রহস্যময় হাসি নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন অর্থমন্ত্রী। হাতে থাকে ব্রিফকেস।

যুগ যুগ ধরে বিশ্বের সব দেশেই বাজেটের দিন এ দৃশ্যের যেন বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। হাতের ব্রিফকেসে লাখ লাখ কোটি টাকা, তবে মুদ্রায় নয়, ছাপানো বক্তব্যে। সংসদে ঢুকে সেই টাকার অঙ্কেরই বয়ান দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীদের এ ব্রিফকেসের রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানার কৌতূহল হয়। বইটিতে ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য।

ব্রিফকেসের ভেতরে থাকা বাজেটের কোনো তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার ব্যবহার করতে পারেন। তাই সঙ্গত কারণেই সংসদে বাজেট পেশের আগে প্রস্তাবগুলো গোপন রাখা চাই। যে অর্থমন্ত্রী বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না, তার পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এ রীতি শুরু হয় ১৮ দশক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্য থেকে। বাজেটপ্রধানকে এ ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন ‘লাল একটি স্যুটকেসে’ বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়। প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ বিভাগের প্রধান। তবে এ রহস্যময় ব্রিফকেসের রং সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে।

তবে রং যাই হোক না কেন, এ ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। আসলে বাজেট শব্দটির উৎপত্তিই যে এ ব্রিফকেসের দিকে নির্দেশ করে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরোনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।

তবে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির বর্ণনা একটু অন্য রকম। এতে বলা হয়, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে— কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করার মতো। ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২১ সালে ব্রিফকেসের প্রথা ভেঙে লাল মোড়কে মোড়ানো ট্যাবলেট নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন। কাগজপত্র ছাড়া ট্যাবলেট থেকে বাজেট বক্তৃতা পাঠ করেন তিনি।

এমএমএআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।