যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০৬ জুন ২০২৪
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-করারোপ বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাজেটের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার দাম বৃদ্ধি পণ্যের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

সিগারেট

প্রতিবারের মতো এবারও সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হয়েছে। তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বেড়েছে

জর্দা

প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ৪৮ টাকা ও একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের পান-জর্দা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের ব্যয় বাড়বে।

পানির ফিল্টার

পানি পরিশোধন যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে পানির ফিল্টারের মোট করভার ৩৭ শতাংশ হবে। প্রস্তাব পাশ হলে পানির ফিল্টার বা পিউরিফায়ারের দাম বাড়তে পারে।

এলইডি-এনার্জি সেভিং লাইট

বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে অনেকে বাসায় এলইডি বাল্ব ব্যবহার করেন। এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক শূন্য শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এলইডি-এনার্জি সেভিং লাইটের দাম বাড়বে

কাজুবাদাম

দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এখন কাজুবাদাম চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও। দেশি কাজুবাদামের বাজার প্রসারের চিন্তা মাথায় রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্যটি আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক।

এসি-ফ্রিজ

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া এসি ও ফ্রিজ উৎপাদনে ব্যবহৃত পণ্যে আমদানি শুল্কে রেয়াতি হার প্রত্যাহার করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব ও সুপারিশ পাস হলে এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়বে

গাড়ি কনভার্সন

গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।

জেনারেটর

লোডশেডিং মোকাবিলায় বাসাবাড়ি বা শিল্পে জেনারেটরের ব্যবহার বাড়ছে। জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে।

বিদেশি মাছ

বিদেশ থেকে আমদানি করা ম্যাকরেল মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর যোগ করায় দাম বাড়তে পারে।

শিল্পের কাঁচামাল

শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ তালিকায় আছে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, শিরিষ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহৃত এলইডি বাল্ব, বাতি উৎপাদনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয়।

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের গাড়ি

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহৃত সামগ্রীতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্য শুল্ক-কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।

বিনোদন পার্ক

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান মূসক হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে বাড়তে পারে ঘোরাঘুরির খরচ।

অফিস-বাড়ির নিরাপত্তা

সিকিউরিটি সার্ভিস সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মূসক হার ১০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এ সেবায় ১৫ শতাংশ মূসক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অফিস, বাড়িসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগে বাড়তে পারে খরচ।

লটারি

লটারির টিকিট বিক্রয়কারী সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মূসক হার ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাইকের যন্ত্রাংশ

২৫০ সিসির ঊর্ধ্বসীমার ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের জন্য যন্ত্রাংশগুলো আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ এ মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করেছেন তিনি। ফলে বাইক মেরামতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা।


প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরি

আমদানি শুল্ক দ্বিগুণের (১০ শতাংশ) প্রস্তাব করায় প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং বা প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং তৈরিতে খরচ আরও বাড়বে।

ইট

ভবন তৈরির অন্যতম উপকরণ ইটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি হাজারে ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি সাধারণ ইট (নন-রিফ্রেকটরি বিল্ডিং ব্রিকস), ফেসিং-এ ব্যবহৃত ইট ছাড়া অন্যান্য ইটে প্রতি হাজারে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকা, যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি ইট প্রথম গ্রেডের (তিন ছিদ্র বিশিষ্ট, ১০ ছিদ্র, ১৭ ছিদ্র ও মালটি কোরড ইট) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ ৭০০ টাকার পরিবর্তে প্রতি হাজারে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। এছাড়া ব্রিকস চিপসের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করের পরিমাণ ৭০০ টাকার পরিবর্তে (প্রতি ১০০ সিএফটি) ৮০ টাকা, মিকাড ব্যাটসের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ ৫০০ টাকার (প্রতি ১০০ সিএফটি) পরিবর্তে ৬০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোমল পানীয়-জুস-আমসত্ত্ব

বাজেটে কার্বনেটেড বেভারেজ ড্রিংকস, নানান ধরনের ফলের জুস ও আমসত্ত্বে (ম্যাংগো বার) শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বনেটেড বেভারেজের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কহার ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে মান অনুসারে সংজ্ঞায়িত কার্বনেটেড বেভারেজের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপাদান অপেক্ষা ভিন্ন মাত্রার উপাদানের পানীয়ের ওপর বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৪০ শতাংশে সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমসত্ত্ব, ম্যাংগো জুস, আনারসের জুস, পেয়ারার জুস ও তেঁতুলের জুসের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূসকের হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

আইসক্রিম

সব ধরনের আইসক্রিমের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কহার পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে আইসক্রিমের দাম আরও বাড়বে।

মোবাইলে কথা বলা

আগে মোবাইল ফোনের কল রেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো গ্রাহকদের। এখন তা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এরসঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহার

আগে মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো গ্রাহকদের। এখন তা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এরসঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।

মোবাইলের সিম

বর্তমানে মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের ওপর কর রয়েছে ২০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বাড়তি দামে গ্রাহককে সিমকার্ড কিনতে হবে।

চিকিৎসা ব্যয়

কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ ছিল। ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাব্যয় আরও বাড়তে পারে।

বৈদ্যুতিক মিটার

প্রি-পেইড কিলোওয়াট আওয়ার মিটার ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বৈদ্যুতিক মিটারের দাম বাড়তে পারে।

এসএম/জেডএইচ/জিকেএস/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।