নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে সহযোগিতা দেবে সরকার: শিল্পমন্ত্রী
ব্যবসাবান্ধব শুল্ক-কর প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে সরকার সবধরনের সহযোগিতা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। সভাপতি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে আপনারা (উদ্যোক্তা) দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। আপনাদের জন্য পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি। এরপরও দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল চক্রান্ত করেছে। ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে ছিল, আছে। এজন্য সরকার আপনাদের প্রতি আন্তরিক।
এখন আইনশৃঙ্খলাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুব ভালো আছে। আপানাদের কোনো রকম সমস্যা হবে না। আপনারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করুন। সরকার আপনাদের সবধরনের সহায়তা দেবে। এছাড়া শুল্ক-করের যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটা বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে কথা বলছি, সমাধান করা হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতি ভালো নয়। যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, দেশে ডলার সংকট। তার মধ্যেও আপনারা (ব্যবসায়ী) ভালো করছেন। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছেন। এখন আপনাদের সহযোগিতায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেশ।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা একটি ব্যবসাবান্ধব নীতি চাই। আমরা চাই আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব। শুল্ক-করের হয়রানি থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাবে।
দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেন, আম, আলু, আনারস, কলা, তরমুজসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে আপনারা এগিয়ে আসুন। শাকসবজি, পেঁয়াজ, আম, টমেটো প্রভৃতি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণে আরও বেশি বিনিয়োগ করুন।
আব্দুস শহীদ বলেন, কৃষি উৎপাদনে এরকম ঈর্ষণীয় সাফল্য থাকা সত্ত্বেও আমরা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রপ্তানিতে অনেকটা পিছিয়ে। প্রক্রিয়াজাতকরণের কম সুযোগ ও সংরক্ষণাগারের অভাবে আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। অন্যদিকে বছরে আমাদের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয় মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের মতো। অথচ এখানে সম্ভাবনা অনেক বেশি। কৃষিপণ্য রপ্তানি করে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রাণ-আরএফএলের দুটি প্রতিষ্ঠানসহ ২০ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১। অনুষ্ঠানে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের পক্ষে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইলিয়াছ মৃধা এবং রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের পুরস্কার গ্রহণ করেছেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর এন পাল।
এ সময় পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে থেকে দেওয়া বক্তব্যে প্রাণের এমডি ইলিয়াছ মৃধা বলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের পণ্য ১৪৫টি দেশে রপ্তানি করছে। দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এ দেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে প্রাণ-আরএফএল সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে। দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া সেরা দশটি পণ্যের মধ্যে প্রাণ সাতটি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ প্রতিষ্ঠান টানা ২০ বার ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি’ অর্জন করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি একটি বিশ্বমানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডাটাবেজ এবং শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনএইচ/এমএএইচ/জেআইএম