বিদেশিরা পুঁজিবাজার ছাড়ছেই
দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা। চলতি মে মাসের ২১ দিনেই বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে প্রায় দেড়শোটি। আর চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিদেশিদের বিও হিসাব কমেছে তিনশোটির বেশি।
দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমলেও স্থানীয় তথা দেশি বিনিয়োগকারী বাড়ছে। চলতি মে মাসে শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে প্রায় দুই হাজার। আর বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তা বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না, যে কারণে তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। ফ্লোর প্রাইস এক দফায় তাদের আস্থা নষ্ট করেছে। এখন দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আরও প্রবল হয়েছে।
তারা বলছেন, শেয়ারবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ ঠিক নয়। শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না।
আরও পড়ুন
- মন্দার পুঁজিবাজারে বাড়ছে দেশি বিনিয়োগকারী, কমছে বিদেশি
- বেহাল শেয়ারবাজার, নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন সম্ভব নয়।
বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। এই সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ২১ মে শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৮টি। যা এপ্রিল মাস শেষে ছিল ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩১টি। এ হিসাবে মে মাসের ২১ দিনে বিও হিসাব বেড়েছে এক হাজার ৮৫৭টি।
২০২৩ সালের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ২০৪টি। এ হিসাবে চলতি বছর বিও হিসাবে বেড়েছে ১৭ হাজার ৪৮৪টি।
সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৭১টি। যা এপ্রিল শেষে ছিল ১৭ লাখ ১৬ হাজার ১৫৪টি। অর্থাৎ মে মাসের ২১ দিনে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে এক হাজার ৯১৭টি। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৬৫টি। এ হিসাবে চলতি বছরের এসময়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৭ হাজার ৩০৬টি।
বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৫৫ হাজার ৪৭টি। এপ্রিল শেষে এ সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ১৮৩টি। অর্থাৎ চলতি মাসের ২১ দিনে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১৩৬টি। আর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৩৪৮টি। এ হিসাবে চলতি বছরে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৩০১টি।
বর্তমানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৮টি। এপ্রিল শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৬৫টি। অর্থাৎ পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৬৭৩টি।
অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব রয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ১৮০টি। এপ্রিল শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১০৮টি।
আরও পড়ুন
বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৫৭০টি। এপ্রিল শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪৯৪টি। সে হিসাবে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৭৬টি।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬৮টি, যা এপ্রিল শেষে ছিল ১২ লাখ ৫৭ হাজার ২০৪টি। অর্থাৎ একক নামে বিও হিসাবে বেড়েছে ২ হজার ৫৬৪টি।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৫০টি। এপ্রিলে যৌথ বিও হিসাব ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ১৩৩টি। অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ৭৮৩টি।
শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। যে কারণে তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজারের ওপর থেকে বিদেশিদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। এখন আবার দাম কমার সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে কেন শেয়ারবাজারে আসবে।
‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সূচকের ওপর হস্তক্ষেপ না করা। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বাজারের পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো কঠিন হবে’- এমনটিই মনে করেন অধ্যাপক আবু আহমেদ।
এমএএস/এমকেআর/জিকেএস