‘বৈষম্য কমাতে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে’
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সব শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত এক যুগে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এর সামান্যই এ দেশের সাধারণ শ্রমিক পেয়েছেন।
তিনি মন্তব্য করেন, মূল্যস্ফীতির উঁচু মাত্রার কারণে বিগত প্রায় দুই বছর ধরে স্বল্প আয়ের মানুষদের ওপর চাপ অনেক বেড়েছে। সুতরাং বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের ঘোষিত যে নীতি রয়েছে সেটি বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস আয়োজিত মে দিবসের এ স্মারক বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিলস এর ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবি সংগঠনসমুহের নেতারা।
শিল্পের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত মজুরি পরিবারের সবার শোভন জীবন ধারনের জন্য পর্যাপ্ত কি না এ প্রশ্ন রেখে খলীকুজ্জমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়, বৃদ্ধির অনুপাতে যা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু পারিবারিক শোভন জীবন-ধারন বিবেচনায় যা বাড়ানো হয়েছে তা অপ্রতুল। আর অব্যাহত মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে বর্তমান মজুরি নিতান্তই অপ্রতুল। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭০ টাকা করা হলেও এর ভিত্তি এত স্বল্প যে এ বৃদ্ধি প্রকৃত অর্থে তেমন কিছুই নয়।
তিনি মন্তব্য করেন, ভারতে শিল্প ও সামাজিক সুরক্ষা আইন ও বিধিমালার আওতায় চা শ্রমিকরাও সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুতরাং বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের জীবনমান শোভন পর্যায়ে উন্নয়নের দাবি রাখে।
কুটির শিল্প ও মাইক্রো উদ্যোগ ও ব্যবসার দিকেও নজর দেয়ার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে খলীকুজ্জমান মন্তব্য করেন, এ ক্ষেত্রে মালিকদেরকে অতি প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও শ্রমিকদের আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার দিকে নজর দিতে হবে।
শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচ্য হিসেবে উল্লেখ করে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে যেসব শ্রমিক সংগঠন একাত্ম থাকতে পারেনি তারা বিলীন হয়ে গেছে। তারা বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা এখনও শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন এবং তারা এখনও বৈষম্যের শিকার, বিশেষ করে ন্যায্য মজুরি, আইনি মর্যাদা ও সামজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।
বিলস এর উদ্যোগে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে মে দিবস স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে মে দিবসের চেতনার সঙ্গে সমুন্নত রাখা এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শ্রমিক আন্দোলনের করণীয় বিশ্লেষণে এ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ পর্যন্ত বিলস আয়োজিত মে দিবসের স্মারক বক্তৃতায় কামাল লোহানী, শেখর দত্ত, এম এম আকাশ, মঞ্জুরুল আহসান খানসহ অনেকে তাদের বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এ আয়োজন সমৃদ্ধ করেছে। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সিনিয়র নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এ বছর অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ো, শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত কবো।
ইএআর/এমআইএইচএস/জেআইএম