আগামী ২-৪ বছরের মধ্যে নতুন মেগা প্রজেক্ট দরকার নেই
‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক কোটি পরিবারকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেটা চলমান থাকুক। যারা পাওয়ার যোগ্য সত্যি সত্যি তারা পাচ্ছে কি না সেটি দেখতে হবে। এখানে একটি সার্ভে করে দেখা যারা পাওয়ার তারই পাচ্ছে, নাকি অন্যরা পাচ্ছে।’
আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আসন্ন বাজেটে কোন কোন খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বাজেটের আকার কেমন হওয়া উচিত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সে সব বিষয়ে তুলে ধরেছেন নিজের অভিমত। বিনিয়োগ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ, সুদের হার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বরাদ্দ নিয়েও কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ শিপন।
জাগো নিউজ: বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
আহসান এইচ মনসুর: বাজেটের আকার ছোট হতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কিছু করছাড় কমাতে হবে। সরকারের বাজেট সাপোর্টের জন্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ঋণ নেওয়াটা কমাতে হবে। তা না হলে বাজার খুব অস্থিতিশীল থাকবে। বাজেটের ঘাটতি কম ধরতে হবে। যে ঘাটতি ধরা হবে, সেই ঘাটতি যতদূর সম্ভব বিদেশি ঋণ নিয়ে মেটাতে হবে।
জাগো নিউজ: কোন কোন খাতে করছাড় কমাতে হবে?
আহসান এইচ মনসুর: এটা সরকারকেই ঠিক করতে হবে। আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের কিছু অভিমত আছে। এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) থেকে কিছু স্ট্যাডি করা হয়েছিল বলে শুনেছি। সেগুলোর ভিত্তিতে প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) ঠিক করতে হবে। করছাড় কমিয়ে দিলে রাজস্ব আয় বড়বে।
এক নম্বর হলো- বাজেটের আকার কমিয়ে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ কম নিতে হবে। দুই নম্বর হলো- টাকা ছাপানো যাবে না, বাজেটকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। টাকা ছাপানো বন্ধ রাখতে হবে। তিন নম্বর হলো- সুদের হার আরও বাড়তে দিতে হবে।
জাগো নিউজ: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে নতুন করে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি?
আহসান এইচ মনসুর: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক কোটি পরিবারকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেটা চলমান থাকুক। যারা পাওয়ার যোগ্য সত্যি সত্যি তারা পাচ্ছে কি না সেটি দেখতে হবে। এখানে একটি সার্ভে করে দেখা যারা পাওয়ার তারই পাচ্ছে, নাকি অন্যরা পাচ্ছে। কিন্তু এক কোটি পরিবার থেকে বাড়ানোর দরকার নেই। কারণ এক কোটি পরিবার মানে প্রায় ৪-৫ কোটি লোক। আর দরকার নেই।
জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে বড় নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া উচিত হবে?
আরও পড়ুন
- ৬৪ শতাংশ মানুষের বাজেট নিয়ে কোনো প্রত্যাশা নেই: সিপিডি
- আসছে বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকা: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
- বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে কাজ করছি
আহসান এইচ মনসুর: নতুন মেগা প্রজেক্ট আগামী ২-৪ বছরের মধ্যে নেওয়ার দরকার নেই। তবে যেটা চলমান এবং জাপানি মুদ্রায় যেগুলো আসছে, যেমন মেট্রোরেল- এগুলো করতে পারবে। এগুলোর টাকা ছাড় হচ্ছে এবং জাপানি ঋণ খুব সস্তা। ওদের কাজও ভালো। এ প্রকল্পগুলো করতে পারে। কিন্তু চীনা ঋণ নিয়ে বা পরমাণবিক দ্বিতীয় বিদ্যুৎ প্রকল্প- এ ধরনের প্রকল্প হাতে না নেওয়া ভালো।
জাগো নিউজ: বাজেটের আকার কেমন হওয়া উচিত?
আহসান এইচ মনসুর: বাজেটের আকার নির্ভর করে আমাদের সরকারের রাজস্ব আদায়ের ওপর। রাজস্ব যদি বাড়াতে পারে, তাহলে বাজেটের আকার বাড়তেই পারে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আয় কম হওয়ার কারণে বাজেটের আকারটা এখন খুবই ছোট। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৩-১৪ শতাংশে নেমে আসছে, এটা হওয়া উচিত ২৩-২৪ শতাংশ। কিন্তু আমরা যেহেতু রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারবো না, সুতরাং এই মুহূর্তে বাজেটের আকার ছোট রাখা উচিত।
জাগো নিউজ: মূল্যস্ফীতি মানুষকে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে। এক্ষেত্রে আপনার কোনো পরামর্শ থাকবে কি?
আহসান এইচ মনসুর: হ্যাঁ। এক নম্বর হলো- বাজেটের আকার কমিয়ে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ কম নিতে হবে। দুই নম্বর হলো- টাকা ছাপানো যাবে না, বাজেটকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। টাকা ছাপানো বন্ধ রাখতে হবে। তিন নম্বর হলো- সুদের হার আরও বাড়তে দিতে হবে।
বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত এমনিও হচ্ছে, অমনিও হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তো বিনিয়োগ হবে না। কাজেই আমাকে আগে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল করতে হবে। তখন বিনিয়োগ আসবে।
জাগো নিউজ: সুদের হার বেড়ে গেলে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আহসান এইচ মনসুর: হ্যাঁ, শেয়ারবাজারের একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু এটার (সুদের হার বাড়া) দরকার আছে। এটা দিয়ে এক্সচেঞ্জ রেট (মুদ্রার বিনিময় হার) স্থিতিশীল করতে হবে।
জাগো নিউজ: এতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে কি না?
আহসান এইচ মনসুর: বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত এমনিও হচ্ছে, অমনিও হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তো বিনিয়োগ হবে না। কাজেই আমাকে আগে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল করতে হবে। তখন বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু বর্তমান পরিবেশ বজায় রেখে সুদের হার কমালেও বিনিয়োগ হবে না। হয়েছে গত কয়েক বছরে? হয়নি।
জাগো নিউজ: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
আহসান এইচ মনসুর: যদি সরকারের আয় বাড়ে তাহলে অবশ্যই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়াতে পারবে। কিন্তু আয় না বাড়িয়ে খুব বেশি ব্যয় বাড়ানোর সক্ষমতা নেই।
এমএএস/এএসএ/এএসএম