বললেন নতুন চেয়ারম্যান
ন্যাশনাল ব্যাংকের আর এক টাকাও লুটপাট হতে দেওয়া হবে না
ন্যাশনাল ব্যাংকের খারাপ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ। একই সঙ্গে আগামী এক বছরের মধ্যে এক টাকাও লুটপাট হতে দেওয়া হবে না। এসময়ের মধ্যে ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা হবে।
সোমবার (৬ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। এসময় নতুন পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিকভাবে ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধনে কোটি টাকা বিভিন্ন আমানত সংগ্রহ ক্যাম্পেইন ও প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। এতে করে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকট নিরসন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া খারাপ হয়ে যাওয়া ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষত খারাপ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেন, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি। যদিও তিনি নবনিযুক্ত পর্ষদের প্রতিনিধি পরিচালকদের পরিচয় দিতে পারেননি। এমনকি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি প্রতিনিধি পরিচালকরাও। এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন চেয়ারম্যানসহ প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার চাপের মুখে আগের পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ ৪ জন পদত্যাগ করেন। পরে রোববার নতুন পর্ষদ নিযুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটি দখলে নিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করা হবে না। তারপরই দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের আর্থিক উন্নতির শর্ত দিয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ওই শর্ত পূরণ করার চেষ্টা করা হবে। আল্লাহ চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে।
এর আগে রোববার (৫ মে) মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংককে (এনবিএল) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এখনই কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক। গত ২৭ এপ্রিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর মধ্যেই ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এ বিষয়ে জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন পদত্যাগ করেছিলেন। এ কারণে নতুন করে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ এখন থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালক এবং কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। নতুন পর্ষদের অন্য নতুন সদস্যরা হলেন- ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচাকের মধ্যে রয়েছেন লে.জে. মো. সফিকুর রহমান (অব.), প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তফাজ্জল হক।
স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, ড. রত্না দত্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা। আগের পর্ষদের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ছাড়া নতুন পর্ষদে কাউকে রাখা হয়নি।
নানা আর্থিক সমস্যা আর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ সাড়ে চার মাস আগে ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন মনোয়ারা সিকদার, রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও মুরশিদ কুলি খানকে বাদ দেওয়া হয়। কেবল সিকদার গ্রুপ থেকে পারভীন হক সিকদারকে পরিচালক হিসেবে রাখা হয়। তবে রোববার নতুন পর্ষদ থেকে তাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ এখন সিকদার গ্রুপের বাইরে চলে গেছে।
ইএআর/এমআইএইচএস/এমএস