এসপিএম শেয়ার কেলেঙ্কারির রায় বুধবার


প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

শেয়ার কেলেঙ্কারির অ‌ভি‌যো‌গে দা‌য়ের করা সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এসপিএম) লিমিটেডের মামলার রায় আগামীকাল বুধবার (২০ এপ্রিল) ঘোষণা করা হবে। এর আ‌গে, গত মঙ্গলবার (১২ এ‌প্রিল) পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক হুমায়ুন কবীর (জেলা ও দায়রা জজ)।

জানা গে‌ছে, এসপিএমসহ তিনজনকে আসামি করে ১৯৯৮ সালের কেলিঙ্কারির দায়ে ২০০৪ সালে মামলাটি দায়ের করে পুঁ‌জিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। মামলার আসামিরা হলেন এসপিএমসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও সৈয়দ মহিবুর রহমান। বর্তমানে তারা পালাতক রয়েছেন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত দিনে ট্রাইব্যুনালে মালাটির বাদীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২০ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, ৬ এপ্রিল বিএসইসির পক্ষ থেকে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদনে জানানো হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১২ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (মঙ্গলবার) মামলাটির যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান জানান, মামলাটিতে বিএসইসির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আগামী ২০ এপ্রিল রায় ঘোষণা জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি বলেন, আমি মনে করি, সমস্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিলো তা প্রমাণ করতে পেরেছি। আশাকরি ট্রাইব্যুনালের রায় আমরাদের পক্ষেই আসবে।

মামলাটির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত কমিটিতে খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরীকে সদস্য করা হয়। তবে খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুর পর তার স্থানে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কাশেম সিল্ক মিলসের শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেন হয় বলে কমিটি তদন্তে দেখতে পায়। ১৯৯৮ সালের ৩ নবেম্বর ২০ লাখ শেয়ারের কোম্পানিটির ১ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টি ১৬.১৪ শতাংশ বেশি দরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। এই লেনদেন ও দরবৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক।

১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর এসপিএম কাশেম সিল্কের ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ক্রয় ও ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রি করে, যা কাশেম সিল্কের ওইদিনের শেয়ার লেনদেনের ৩৬.৪৬ শতাংশ ও ৩৫.৩০ শতাংশ। তদন্ত কমিটি দেখতে পায়, মো. মহিবুর রহমান ২৪.২৭ টাকা দরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন ও ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন।

তিনি দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে টানা ২২ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করেন। এরপর ক্রয় ও বিক্রির মাধ্যমে আরো ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন। তিনি ২১.৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ ২৫.৯০ টাকা দরে শেয়ার ক্রয় করেন। এতে একই দিনে নিষ্পত্তি ব্যর্থতা এড়াতে বিক্রেতারা সৈয়দ মহিবুর রহমানের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য হয়।

এই পরিস্থিতিতে মহিবুর রহমান ডিকটেটেড মূল্য ২৬ টাকা করে বিক্রি শুরু করেন এবং ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে মহিবুর রহমান ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৯ টাকা ও বাকি থাকা ৯২ হাজার ৩০০ শেয়ার মুনাফা করেন।

মহিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করেন, যা প্রকৃতপক্ষে শেলী রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তার স্বামী লুৎফর রহমান চেকের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন, যা ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহার করা হয় না। মহিবুর রহমান এই শেয়ার ক্রয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকার রেমিটেন্স ব্যবহার করেন। এখান থেকে তদন্ত কমিটি বুঝতে পারে যে, ডিপোজিটকৃত টাকা অর্থায়ন করেন শেলী রহমান।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র ফুটে ওঠে। যা ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় জালিয়াতি। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন। যা ১৭ ধারা লঙ্ঘনের ফলে ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসআই/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।