ঈদের আগেই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার গুঞ্জন

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৪
ফাইল ছবি

• ঈদের আগে দুই দফায় ৫ টাকা বাড়তে পারে তেলের দাম
• বিশ্ববাজারে চলতি বছরে টানা তিন মাস কমেছে তেলের দাম
• শেষ তিন বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম সর্বনিম্ন

বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১ মার্চ থেকে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও নির্ধারিত দামের সয়াবিন তেল বাজারে সরবরাহ করেনি কোম্পানিগুলো। গত সপ্তাহে নতুন দামের তেল বাজারে এলেও এখনো অনেক জায়গায় বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যেই আবার তেলের দাম বাড়বে এমন গুঞ্জন উঠেছে ঢাকার বাজারে।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোজ্যতেল সরবরাহকারী প্রায় প্রতিটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে তেলের দাম বাড়বে বলে তাদের জানিয়েছেন। এ দফায় প্রতি লিটারে দুই টাকা দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। যা আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হতে পারে।

কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাজারে এ-ও বলছেন, ঈদের আগে দুই দফা তেলের দাম বাড়তে পারে। সবমিলে তেলের দাম ৫ টাকা বাড়তে পারে ঈদের আগেই।

বাজারে এসব কথা চাউর থাকলেও কোম্পানিগুলো এখনো তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে এটা ঠিক। তবে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

একই দিনে ঢাকার কয়েকটি বাজারে কথা হয় বেশকিছু বিক্রেতার সঙ্গে। শান্তিনগর বাজারে ভাই ভাই স্টোরের কর্ণধার আনোয়ার খান বলেন, আজ সকালেই রূপচাঁদা কোম্পানির লোক বলে গেছে তেলের দাম বাড়ছে। কয়েকদিন আগে সিটিও (তীর ব্র্যান্ডের তেলের বিক্রয় প্রতিনিধি) বলে গেছে।

তিনি বলেন, তারা (কোম্পানিরা) এখন এমন হয়েছে, রাত বললে রাত, দিন বললে দিন। যখন যেটা বলবে সেটাই হবে। আমরা সবাই জানি দাম বাড়বে।

আরও পড়ুন

রামপুরা বাজারে মুদি দোকানি শামীম আহম্মেদ বলেন, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা (এসআর) বলেছেন, এখন দুই টাকা বাড়বে। এরপর আরও তিন টাকা বাড়বে ঈদের আগেই। যদি সেটা না হয়, তবে কোম্পানি মিথ্যা কথা বলে বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে। যাতে দোকানিরা বেশি বেশি তেল মজুত করে ঈদের আগে। এটাও তাদের বিক্রি বাড়ানোর কৌশল হতে পারে।

‘বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে এটা ঠিক। তবে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’ — টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে বাড়তি দামের মোড়ক লাগিয়ে সব সময় প্রস্তুত থাকে। কিন্তু কমানোর সময় ধীরগতিতে কমায়। এবার নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা বেশ আগেভাগে দেওয়া হলেও মিল থেকে ডিলার হয়ে এখনো নতুন দামের পণ্য বাজারে আসেনি।এক সপ্তাহ কম দামে তেল বিক্রি করেই এখন বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে সরকার। যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা হওয়া কথা।

এদিকে, পাইকারি বাজারে গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। পাম তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা বেশি। গত এক সপ্তাহ কেজিতে প্রায় ২-৩ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

বিশ্ববাজারে সঙ্গে ঠিকঠাক সমন্বয় নেই
কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কথা বললেও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে ও বিশ্ববাজারে তেলের কমতি দাম সমন্বয় হয় না ঠিকঠাক মতো। বিশ্ববাজারে ২০২২ সালে ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ওই বছর সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল প্রতিটন ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। সেসময় দেশেও তেলের দাম সমন্বয়ে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন

এরপর থেকে ২০২৩ সাল এবং চলতি বছরের টানা তিন মাস তেলের দাম কমছে। এখন প্রতিটন সয়াবিনের গড় দাম ৯১২ ডলারে নেমেছে, যা তিন বছরের সর্বনিম্নে। তবে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৬৩ টাকা।

‘কয়েকদিন ধরে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। পাম তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা বেশি। এক সপ্তাহ কেজিতে প্রায় ২-৩ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।— পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি

বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের (পিংক শিট) মার্চ সংস্করণের তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে পণ্যটির গড় দাম কমে প্রতি টন ৯১২ ডলারে নেমেছে, যা তিন বছরের সর্বনিম্নে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ২০২২ সালে ১ হাজার ৬৬৭ ডলার ছিল। পরের বছর ২০২৩ সালে গড় দাম ১ হাজার ১১৯ ডলারে নেমে আসে। চলতি বছরেরও দুই মাস টানা কমছে তেলের দাম। জানুয়ারিতে গড় দাম ছিল ৯৭১ ডলার। অর্থাৎ ২০২২-এর তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন কমেছে ৪৫ শতাংশ।

করোনাকালে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট দেখা দিলে ২০২২ সালে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। তবে, গত বছরের শুরুতেই ভোজ্যতেলটির দাম কমতে শুরু করে। এখন দ্রুত কমছে, যা সমন্বয় করলে দেশে তেলের দাম আরও কমার কথা।

দেশে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও ব্যবসায়ীরা। পরে তা কার্যকরের ঘোষণা দেয় মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে ট্যারিফ কমিশনকে না জানিয়ে অনেকবার বাজারে তেলের দাম কার্যকর করেছে কোম্পানিগুলো।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী দাম ও আমদানি শুল্ক কমলেও দেশে সে হারে কমেনি সয়াবিন তেলের দাম।

এনএইচ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।