‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকব্যবস্থা ধ্বংস করছে’
সম্প্রতি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের নানাবিধ সংকট নিয়ে যে সমালোচনা তা সঠিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকব্যবস্থা ধ্বংস করছে। কতিপয় ব্যাংক এতই খারাপ অবস্থায় চলে গেছে যে, তাদের সংকট থেকে উত্তরণ করা খুবই কঠিন হবে।’
জাগো নিউজকে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সব সময় সমান পরিস্থিতিতে থাকে না। কখনও রেড জোনে আবার কখনও ইয়োলো বা গ্রিন জোনে অবস্থান করে। সময় ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ব্যাংকের অবস্থানও বদলাতে পারে। কিন্তু এখন যে অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকগুলো, তাকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে হয়। কারণ অধিকাংশ ব্যাংকই রেড অথবা ইয়োলো জোনে রয়েছে। এটিকে স্বাভাবিক ব্যাপার বলার কোনো সুযোগ নেই।’
সব কিছুর একটা শেষ আছে। দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ জন্মের পর সর্বোচ্চ। এই খেলাপি ঋণ তো একদিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে হয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তার মানে সরকার সঠিক উদ্যোগটি গ্রহণ করতে পারে না।
কী কারণে ব্যাংকগুলোর সংকট- এমন প্রশ্নের বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ‘মূলত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার কারণে আজকের এ সংকট। ন্যাশনাল ব্যাংকের দিকে খেয়াল করবেন। একেবারে পরিচালনা পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে রেড জোনে চলে গেছে। অন্য ব্যাংকগুলোও তাই। যারা পরিচালক, তারা যা মন চাইছে তাই করছে। আর ইসলামী ব্যাংক খারাপ অবস্থায় গেছে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে। সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এখান থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণের নামে লুট করেছে।’
আরও পড়ুন
- এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে পদ্মা ব্যাংক
- ১২ ব্যাংক অত্যন্ত নাজুক, ইয়েলো জোনে ২৯টি
- ব্যাংক খাত নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার
‘ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে। ঋণ দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক তদবিরে। আর্থিক খাতে এভাবে রাজনীতি গুরুত্ব পেলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেকের লিমিট কমিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা না করে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে আরও অর্থ দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থাই ভালো নয়। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখা যায় না। টিকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তাতে সফলতা আসতে পারে। তবে করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। এখানেও তো রাজনীতি গুরুত্ব পাবে। হস্তক্ষেপ তো সর্বত্রই।
এমন সংকটের মধ্যেও কোনো কোনো ব্যাংক ভালো করছে। তার মানে তাদের ব্যবস্থাপনা পরিষদ অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে না। ভালো ১০টি ব্যাংকের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন অন্যগুলো কেন খারাপ করছে।’
আমি মনে করি, গ্রাহকদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার। খারাপ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন না করাই ভালো। পদ্মা ব্যাংক তো মানুষের টাকা দিতে পারছে না। ভালো ব্যাংকের সঙ্গে থাকলে অন্তত চিন্তামুক্ত থাকা যায়।
‘সব কিছুর একটা শেষ আছে। দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ জন্মের পর সর্বোচ্চ। এই খেলাপি ঋণ তো একদিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে হয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তার মানে সরকার সঠিক উদ্যোগটি গ্রহণ করতে পারে না। হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ সংসদে দাঁড়িয়ে ব্যাংকের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভালো বলেছেন। সরকারি ব্যাংকের দেখভাল করবে সরকার। জনগণের আমানত নিয়ে সরকারি ব্যাংক এভাবে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। সরকারি ব্যাংকের টাকা লোপাট করছে কে? এটি খুঁজে বের করুন। জনগণ এর খেসারত দেবে কেন?’ বলছিলেন আবু আহমেদ।
শেয়ারবাজার সংকটের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাত আর শেয়ারবাজারের সংকট এক বিষয় নয়। তবে যারা শেয়ারবাজারের টাকা লুট করেছে, তারাই ব্যাংকের টাকা লুট করছে। এই চক্র কোনো না কোনোভাবে সরকারের আনুকূল্য পান। শেয়ারবাজারের সংকট যেভাবে দৃশ্যমান হয়েছে, ব্যাংকের সংকট সেভাবে বোঝা যাবে না। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিলে এমন ক্রাইসিস তৈরি হতো না।
আমি মনে করি, গ্রাহকদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার। খারাপ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন না করাই ভালো। পদ্মা ব্যাংক তো মানুষের টাকা দিতে পারছে না। ভালো ব্যাংকের সঙ্গে থাকলে অন্তত চিন্তামুক্ত থাকা যায়।’
এএসএস/এএসএ/এএসএম