খাতুনগঞ্জ

জোগান পর্যাপ্ত, তবু বাড়তি ছোলা-পেঁয়াজ-খেসারির দাম

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:১২ পিএম, ১১ মার্চ ২০২৪
বিভিন্ন ধরনের ছোলা ও ডাল/ফাইল ফটো
  • সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা
  • খেসারি ২০ টাকা, পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়েছে
  • খাতুনগঞ্জে স্থিতিশীল হলেও খুচরায় বেড়েছে চিনির দাম

রোজা সামনে রেখে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে খুচরা দোকানে নিত্যপণ্যের জোগান বেড়েছে। বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত। তবু সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি ছোলা, খেসারি, পেঁয়াজের দাম। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও স্থিতিশীল চিনির বাজার। দাম বেঁধে দেওয়ায় ভোজ্যতেলের বাজারে রয়েছে স্বস্তি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের কোথাও কোথাও রোজা শুরু হয়ে গেছে। এখন আর ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। ধীরে ধীরে চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুরের দাম কমে আসবে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রমজানের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে প্রশাসন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ছোলা খালাস হয়েছে ৯৭ হাজার ১শ টন, মটর খালাস হয়েছে ৭৫ হাজার ১৫ টন, মসুর ডাল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯০ টন, সয়াবিন ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৭ টন, পাম অয়েল ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৩ টন, ‘র’ চিনি ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৬ টন এবং খেজুর খালাস হয়েছে ৩৭ হাজার ৬২০ টন।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলার সংকটের মধ্যেও রমজান সামনে রেখে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি করা এসব পণ্য খুচরা পর্যায়ের দোকানগুলোতে পৌঁছেও গেছে।

ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে এবার আগেভাগে পদক্ষেপ নেয় সরকার। রমজানে বেশি চাহিদা থাকা পণ্যগুলো ৯০ দিনের সাপ্লাইয়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পুরোনো আমদানিকারকরা এখন বাকিতেও পণ্য আমদানি করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এলসি করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ন্যূনতম পেমেন্ট দিয়েও রমজানের ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিকারকরা বিশেষ এ সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি রমজান সামনে রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব চাল আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) ২৫ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৫ শতাংশ। ১৫ মে পর্যন্ত চাল আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন।

জোগান পর্যাপ্ত, তবু বাড়তি ছোলা-পেঁয়াজ-খেসারির দাম

অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে এক হাজার টাকা, যা আগে ছিল প্রতি টনে দেড় হাজার টাকা। পরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে, যা আগে তিন হাজার টাকা ছিল। শুল্কছাড়ের এ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের উৎপাদন এবং ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে দেশে পরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তার মানে সয়াবিন ও পাম অয়েলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়েছে ৫ শতাংশ।

বাজারে লোক দেখানো মনিটরিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও রোজা শুরু হয়ে গেছে। রমজান সামনে রেখে আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের পণ্যের দাম। চিনি, ছোলা, খেজুরের দাম বেড়েছে বেশি। আমাদের দেশে রমজানের শুরুতে একসঙ্গে বেশি পণ্য কেনার প্রণবতা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রমজানের আগে থেকে শুরু করে রমজানের শুরুতে পণ্যের বেশি দাম আদায় করে। এজন্য প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং দরকার।- ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন

একইভাবে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন।

জোগান পর্যাপ্ত, তবু বাড়তি ছোলা-পেঁয়াজ-খেসারির দাম

আরও পড়ুন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক কমানোর পর সরকার চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক সপ্তাহ চিনির বাজার উত্তপ্ত থাকলেও এ সপ্তাহের শুরুতে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে বেশি চাহিদা থাকে ছোলার। আমদানিকারকদের মতে, বছরে ছোলার চাহিদা প্রায় দুই লাখ থেকে সোয়া দুই লাখ টন। এর মধ্যে রমজানেই কেবল চাহিদা থাকে ৭০ হাজার টনের ওপরে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে ছোলা প্রতি কেজিতে দু-তিন টাকা বেড়েছে। সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে অস্ট্রেলিয়ান ভিআইপি ৯৫ টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম মানের অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৯৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শুধু অস্ট্রেলিয়ান ছোলা রয়েছে।’

এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খেসারির দাম। প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। সোমবার বাজারে ভালোমানের খেসারি ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগে ১০৪-১০৫ টাকা ছিল। বাজারে চিনির মূল্য এখন স্থিতিশীল। গত সপ্তাহে প্রতি মণ রেডি চিনি ৫০৭০-৮০ টাকা উঠেছিল। আজ (সোমবার) বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ রেডি চিনি পাঁচ হাজার ১০ টাকা।

মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুনের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি ঘোষণার ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো চাক্তাইয়ে আসেনি। বাজারে যেসব ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো কালোবাজারের মাধ্যমে আসছে। এগুলোর সিন্ডিকেট রয়েছে। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম নতুন করে বেড়েছে। বাজারে এখন ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগেও এসব পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। দেশি ‘হালি’ জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮৬-৯০ টাকায়। একমাস আগে এসব পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

জোগান পর্যাপ্ত, তবু বাড়তি ছোলা-পেঁয়াজ-খেসারির দাম

পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে যেতেই প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। কাজির দেউড়ি বাজারের মুদি দোকানি ফয়েজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী বাবুল বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘চিনি আমাদের কেজিপ্রতি ১৩৮ টাকা কেনা পড়ছে। আমরা ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার কেনা পড়ছে ১৬০ টাকা, বিক্রি করছি ১৬৩ টাকায়। ভালো মানের ছোলা বিক্রি করছি ১১০ টাকায়, খেসারি ১২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, আদা ১৮০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।’

এই মুদি দোকানি বলেন, ‘সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও দাম সত্যিকার অর্থে কমেনি। খাতুনগঞ্জে তেল, চিনি, পেঁয়াজের পাইকারি দর নির্ধারিত হয়। খাতুনগঞ্জ থেকে ভোগ্যপণ্য কিনে লেবার চার্জ, আড়তদারি, গাড়ি ভাড়া খরচ করে পণ্যের কেনামূল্য নির্ধারিত হয়। এরপর দোকান ভাড়াসহ অন্য খরচও পণ্যের মূল্যের ওপর হিসাব করতে হয়। সে হিসেবে মুদি দোকানে এখন বেশি লাভের সুযোগ নেই।’

ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে লোক দেখানো মনিটরিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও রোজা শুরু হয়ে গেছে। রমজান সামনে রেখে আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের পণ্যের দাম। চিনি, ছোলা, খেজুরের দাম বেড়েছে বেশি। আমাদের দেশে রমজানের শুরুতে একসঙ্গে বেশি পণ্য কেনার প্রণবতা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রমজানের আগে থেকে শুরু করে রমজানের শুরুতে পণ্যের বেশি দাম আদায় করে। এজন্য প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং দরকার।’

তিনি বলেন, বাজারে এলাচ নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। এটা সত্য। কিন্তু রমজানে কতজন এলাচ খায়। বাজার মনিটরিং টিম চিনি, ছোলা, খেজুরের বাজারে তেমন মনিটরিং করছেন না। লোকজনকে এলাচ দেখিয়ে প্রশাসন তাদের দায় সারছেন। অথচ খুচরা বাজারগুলোতে পণ্যের তালিকাটা নিশ্চিত করতে পারলেও লোকজন অনেক উপকৃত হতেন।

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।